জুডাসের বিশ্বাসঘাতকতা ও গুড ফ্রাইডে
ছবি- প্রতীকী
বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসঘাতকতা- পরস্পরবিরোধী দুটি শব্দ। তবে শব্দ দুটির মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। একটু বিস্ময় জাগতেই পারে এমন কথায়!
বিশ্বাস না থাকলে বন্ধুত্ব হয় না। আর বন্ধুর বিশ্বাস ভাঙাই হলো বিশ্বাসঘাতকতা। খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসঘাতকের কথা উঠলেই চোখের সামনে যে নাম ভেসে উঠে তা হলো- জুডাস ইস্কারিয়ত।
যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন জুডাস। যিশুকে চুমু দিয়ে রক্ষীদের চিনিয়ে দিয়েছিলেন বন্ধুরূপী জুডাস। যিশুকে ক্রুসবিদ্ধ করার দিনটিকেই গুড ফ্রাইডে বা পবিত্র শুক্রবার বলা হয়। যদিও অনেকেই এ দিনকে ব্ল্যাক ফাইডে বলে।
ইস্টার সানডে বা যিশুর পুনরুত্থানের তিনদিন আগে এই দিন পালন করেন খিস্ট ধর্মাবলম্বীরা।
সমাজের কোনাকানি পাপ ও অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল।এসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যিশু। তিনি মানবতা ও শান্তির বার্তা দিতে শুরু করেন। কিন্তু ইহুদি ধর্মীয় নেতাদের প্ররোচনায় তৎকালীন রোমান গভর্নর পন্টিয়াস পিলেট যিশুর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। ইহুদি সমাজপতিদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী যিশুর বিচার ও শাস্তিদানের অনুমতি দেন তিনি।
‘লাস্ট সাপার’-এর পর যিশু আর তার ১২ জন শিষ্য রাতের বেলায় হাজির হন জেরুসালেমের গেতশিমান মন্দিরে। অর্থের বিনিময়ে আগে থেকে মন্দিরের রক্ষীদলের সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়েছিল জুডাসের। গেতশিমান মন্দিরের উদ্যানে যিশুকে চিনিয়ে দিতেই তার গালে চুমু দেন জুডাস। এরপরই মন্দিরের উদ্যান আলোকিত হয়ে ওঠে। ঘিরে ধরে রক্ষীদল। শিষ্যরা বাধা দিতে চাইলেও তা করতে দিলেন না যিশু। যিশুকে গ্রেফতার করে তারা। ক্রুসবিদ্ধ করা হয় যিশুকে।
চাবুকের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত অর্ধমৃত যিশুর কাঁধে তুলে দেওয়া হলো ক্রুশকাঠ। দুই হাতে আর পায়ে পেরেক বিঁধল। ছয় ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড নির্যাতন সহ্য করতে হয় যিশুকে। ধীরে ধীরে আকাশ অন্ধকার করে মৃত্যু নেমে এল।
মনে করা হয়, যিশুর মৃত্যুর দিন ছিল শুক্রবার। আর তাই আজও গোটা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘গুড ফ্রাইডে’। পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে যান বলে মনে করেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। এ মৃত্যু দুঃখের; আবার এ মৃত্যু মুক্তিরও। এজন্য কেউ গুড ফ্রাইডে আবার কেউ ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলে।
পুরো সময়টাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টার পরবের প্রধান দিন হলো ‘গুড ফ্রাইডে’। ঠিক তিনদিন পর, মেরি ম্যাগডালিনের সামনে এসে প্রকট হন যিশু।
গুড ফ্রাইডে’র তাৎপর্য
ক) ভক্তরা এদিনকে যিশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধকরণ ও মৃত্যুর দিন হিসেবে পালন করেন।
খ) খ্রিস্টানরা এদিনে উপবাস করে এবং সক্রিয়ভাবে সামাজিক সেবায় অংশ নেয়। এদিন তারা গীর্জায় যায়।
গ) পুরোহিতরা দিনটিতে কালো বস্ত্র পরে।
ঘ) যিশুখ্রীস্টের শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এদিন ভক্তরা মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলেন।
এসএন/