ঈদ যাত্রায় বাস্তবতা
ফেসবুক বন্ধু আর সতীর্থদের ছবিতে আকাশ-বাতাস ভরে ঊঠেছে। একসাথে ইফতারে মুখরিত হয়েছে গ্রাম বাংলা। দীর্ঘ এক বছর পর আমরা ফিরে পেলাম চিরচেনা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। নাড়ীর টান আটকে রাখবে কে?
ঈদ যাত্রায় বিচ্ছিন্ন দু-একটি দুর্ঘটনা সবাইকে ব্যথিত করে। প্রিয়জনের সাথে মিলিত হতে গিয়ে ছেদও ঘটে। ২০২৩ সালের ঈদ-উল ফিতর আলাদা কিছু নয়। তবুও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে! নাড়ীর টান, নারীর টান, মা-খালার টান, বুবুর টান। মাঝে দুই বছর করোনার জালে ঈদ আনন্দ হয়ে উঠেছিল বিষাদময়। করোনা কাটিয়ে এবার দ্বিতীয় বছর ঈদ উদযাপন।
রাস্তায় ঈদ যাত্রীদের জন্য গাড়ী ছিল ঢের, তবে যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল তা' বলা যাবে না। দীর্ঘ ছুটির কারণে প্রথম দুই দিন বুধবার-বৃহস্পতিবারে রাজধানী ঢাকা থেকে অনেক ঈদ যাত্রী নিজ গ্রামে গমন করেছেন। অনেকেই আবার শেষ কর্মদিবস মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছেন। এখন টিকেট আর গাড়ীর সংকট নেই। মহাসড়ক জুড়ে নেই গাড়ীর সারি, নেই অপেক্ষারত সাধারণ মানুষ। গত বছর লম্বা ছুটির কারণে ঈদযাত্রার চিত্র কিছুটা এমনি ছিল। কিন্তু, আমরা বিগত এক দশক বা আরও বেশি সময় ধরে ঈদযাত্রার বিপরীত চিত্র দেখেছি। এ চিত্র ঈদের আগে শুক্রবারের। ২০ তারিখ বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করার পরে ঈদযাত্রার চিত্র পাল্টে গেছে।
তবে বাস্তবতা ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন ছিল গার্মেন্টস ছুটির দিন। দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত অবধি জ্যামে ঈদযাত্রীদের কষ্ট পেতে হয়েছে। ২০ তারিখ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা না হলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের একত্রে ঈদযাত্রা করতে হতো। তখন হয়তো জটিলতা আরও বেড়ে যেতো।
টিকেট প্রাপ্তি নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ শেষ হল না। কাউন্টারে টিকেট নেই! অনলাইনে শূন্য দেখায়। এসি টিকেট তো সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এটা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য! এই বাস্তবতায় আমিসহ অনেকেই টিকিট কিনেছি, অনেকে গন্তব্য পৌঁছে গেছেন। এরপর যদি অ্যাপে দেখায় এসি ও নন-এসি টিকেট পর্যাপ্ত! তখন কেমন লাগে? মানে পুরাই সিন্ডিকেট! যাত্রীসকল এই ঘটনা বরাবরের মতো এবারেরও দেখেছেন। কিন্তু, সবাই নির্বিকার! এর প্রতিকার আছে কি? তাছাড়াও বাড়তি ভাড়া নেবার অভিযোগ অনেক পুরাতন এবং প্রকাশ্য। ঈদযাত্রা আনন্দের, বাড়তি ভাড়া হলেও তাই অনেকের আপত্তি নেই।
বাবার কর্মস্থলের কারণে আমাদের তিন ভাই-বোনের জন্ম আর বেড়ে ওঠা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে। ছোট থেকে বেড়ে ওঠার কারণে এই এলাকায় মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়; যা এখন অনেক দূরে গেলেও মনে পড়ে। নাড়ির সম্পর্ক আমার দাদা ও নানা বাড়ির মানুষের সাথে। সিংড়া উপজেলার সেসকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। ঈদে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে, অনেকের সাথে দেখা হয়নি। অনেকেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ঈদের নির্ধারিত ছুটির চেয়ে আমি বেশি ছুটি নিয়েছি, তবুও অনেকের অভিযোগ এলে বাড়িতে, দেখা হল না! এলে গ্রামে দেখা হল, তবুও কথা হল না! অতৃপ্ত মনকে কি দিয়ে বাঁধি?
তাইতো বন্ধনহীন হৃদয়কে বলি,
''বহু বছর হয়নি কথা, একটা দিও কল;
মধুতে মাখা কন্ঠ শুনে ভেজাবো এই মন।
নাটোর থেকে রাজধানী ঢাকা আসার পথ এখন তেমন কষ্টদায়ক নয়। ঈদে বাড়ি যাবার সময় যতটা চাপ থাকে, আসার পথে ততটা নয়। ঈদে ফিরতি পথে বাড়তি ভাড়া গুণলেও বাড়তি আনন্দ নিয়েই ঢাকা ফিরেছি। তবে এসি নন-এসি সিট নিয়ে আবারও বিতর্ক। মফস্বলি মানুষের জন্য এসি টিকেট নয়! এসি বাস শুধু শহুরে মানুষের জন্য! তবে সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা সুখকর ছিল।
লেখক-একজন ঈদযাত্রী।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে।
ডিএসএস/