যে গল্পে ভালোবাসা নেই
যে গল্পে ভালোবাসা নেই, সে-ই গল্প হয়তো হৃদয়কে নাড়া দেয় না কিন্তু মানবতাকে ছুঁয়ে যায়। ভালাবাসাহীন গল্প পড়ে রয় ব্যস্ত সড়কের পাশে পড়ে থাকা কোনো ডাষ্টবিনে কিংবা ঘরের কোণে কোনো এক জীর্ণ কার্টুনে। যে গল্পে ভালোবাসা নেই, সে-ই গল্পের নায়কেরা জীবন উৎসর্গ করে দেয় নরক যন্ত্রনার বিষাক্ত বিষ হজম করে। তাদের আর্তচিৎকার শুনে কেউ এগিয়ে আসে না কারণ ভালোবাসাহীন এই গল্পের নায়কদের ব্যথা বেদনা কেউ দেখতে চায় না, কারো হৃদয়কে স্পর্শ করে না তাইতো তারা নীলকন্ঠি হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে নিরবে নিভৃতে। এমনই এক নীলকন্ঠির গল্প শোনাতে চাই,যে গল্পে ভালোবাসা নেই।
শিশুরা ফুলের মত পবিত্র, আকাশের মত উদার, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা কিংবা স্বজন হারা কান্নার মত স্বচ্ছ। শিশুদের অন্তর মসজিদ, মন্দির, গির্জার চেয়েও পবিত্র। তাদের চিত্তে নেই অহংকারবোধ, চাতুরতা, মিথ্যুকতা, নেই অশ্লীলতা। একটি সুস্থ, সুন্দর শিশু ভবিষ্যতের একজন প্রকৌশলী, সমাজসেবক, একজন বুদ্ধিজীবী কিংবা স্ব-পদে সম্মানজনক কেউ কিন্তু ছোটন নামের ছেলেটি, তার ভবিষ্যৎ কি? সম্ভবত একজন ভিক্ষুক! যে ছেলেটি অল্প বয়সেই পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করল, তার আবার ভবিষ্যৎ! গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া এক হতদরিদ্র পরিবারে যার জন্ম, যাকে পিতা-মাতার অশিক্ষা বানিয়ে দিল প্রতিবন্ধী, সেই শিশুকে ঘিরে পিতা-মাতার স্বপ্ন কেমন হতে পারে?
ছোটনের কি স্বপ্ন ছিল না, বড় হয়ে কিছু একটা হবে? অন্য ছেলে মেয়েরা যখন কানামাছি, গোল্লাদৌড়, ডাংগুলি খেলায় মেতে উঠতো তখন তাকে হতাশ হৃদয়ে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতে দেখেছি, মাঝে মাঝে মজার কোন দৃশ্য পেলে অট্টহাসিতে হাততালি দিতে দেখেছি কিন্তু তার এই শৈশবের দুরন্তপণাকে দায়বদ্ধ করে দিয়েছে পোলিও রোগ। ছেলেরা যখন খেলাধুলায় সমস্ত আনন্দ লুটে নিতো, তখন সে অশ্রুসিক্ত নয়নে বেঁকিয়ে পড়া শুকনো অসমতল পায়ের দিকে চেয়ে থাকতো, হয়তো অপারগতা তাকে কুরে কুরে খেতো। যখন সে পা দু'খানায় পরম ভক্তিতে হাত বুলাতো আর হঠাৎই ঠোঁটের কোণে ফিনকি হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলত, বুঝতাম তার দৃষ্টিতে বিধাতার এই অনিয়ম, অবজ্ঞা আর সৃষ্টির সিদ্ধান্তকে সে মেনে নিতে পারেনি। বুঝি বলছে,-"হে প্রভু!আমার মত অবুঝের প্রতি তোমার কেনো এই বিতৃষ্ণা, কেনো এই নিষ্ঠুর প্রহসন? আমাকে আর কষ্ট দিও না, আমায় পরিত্রাণ করো, আমায় ক্ষমা করো! আর দয়া করো!"
ছোটনের বাবা ছিল গরুর দালাল। গরু কেনার জন্য কিংবা কারো গরু ক্রয় বিক্রয় করে দেওয়ার পর যে লভ্যাংশটুকু পেতো তাই দিয়ে কোনরকম সংসার চালাত। সংসার জীবনটা হয়তোবা সুখবর ছিলনা তাই প্রায়শই ছোটনের বাবা-মা ছোটখাটো বিবাদে জড়াতো। তাদের এমন ঝগড়া আর দূরত্ব দেখে ছোটনের মন অজানা আশঙ্কায় দূর দূর কাঁপতো। যাই হোক, ছোটনের বাবা কাজের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে অনেক দুরে যেতো। এমনকি দু-একদিন বাইরে রাত্রি যাপন করতে হতো। তার অনুপস্থিতিতে ছোটনের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। হঠাৎই একদিন স্বামী আর অসহায় সন্তানের কথা ভুলে সেই প্রেমিক লোকটির হাত ধরে হৃদয়ের টানে বাসনা পূরনান্তে লোক চক্ষুর অগোচরে পালিয়ে যায়। পৃথিবীতে এমন মা খুব কমই দেখেছি যে, সন্তানের বুকে পদাঘাত করে চলে যায়। হৃদয়ের টানেই যদি সে চলে যাবে তবে হৃদয় দিয়ে আরেকটু অনুভব করলো না কেনো এক জোড়া চোখকে, যে চোখ দুটো সর্বদায় তাকে খুঁজে ফিরে, মাতৃত্বের জয়গান করে! চলে যখন যাচ্ছেই তখন সন্তানকে সঙ্গে নিলো না কেন? নাকি ভেবেছিল লেতিয়ে পড়া পা টাকে সারা জীবন টানতে হবে। হোক সে প্রতিবন্ধী কিন্তু তারও তো মন আছে, প্রাণ আছে, অনুভূতি আছে, মায়ের জন্য সেওতো ব্যাকুল হয়ে কাঁদে, মায়ের আঁচল খুঁজে বেড়ায়!
দুর্ভাগা ছোটন! কোনো কিছুই কপালে জুটলো না! বাবাটাও তেমন, কাজের প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া আলাদা ব্যাপার কিন্তু অপ্রয়োজনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে যাওয়া, নেশার প্রকোপে পড়া, ইচ্ছে করেই ছেলের কাছে না আসা, এগুলো ছোটনের জন্য খুবই হতাশাজনক ছিলো। পিতা-মাতার এমন বৈষম্যমূলক আচরণ তাকে বেঁচে থাকার প্রতি ঘেন্না জন্মিয়ে দিয়েছিল। আমাদের নিকট যে মানবজীবন এত সুন্দর ও আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘায়ু লাভে ঈশ্বরের নিকট আধ্যাত্মিক প্রার্থনায় ব্যতিব্যস্ত, সেখানে সে নিশ্চুপ, চাঁদ মামাকে ডাকার মতো যমদূতকে তার গৃহে আসার নেমন্তন্ন জানায়। কি অদ্ভুত তার আপন জীবন! বাবা-মায়ের স্বেচ্ছাচারিতা আর খেয়ালিপনা দেখে কত চোখের জল বিসর্জন দিয়েছে, তার হৃদয় খাঁচায় বন্দী পাখির মতো ছটফট করেছে, কত হৃদয় নিংড়ানো মধুর সুরে একবার 'মা' , আরেকবার 'বাবা' বলে ডেকেছে কিন্তু তাদের কেউতো মনের মহার্ত দিয়ে তা শোনেনি, উপলব্ধি করেনি। যখন হাঁটু ফুলে পুঁজ জমা হতো, তখন কি হৃদয়বিদারক আত্মচিৎকার করতো যন্ত্রণা প্রকোপে, তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। যখন যন্ত্রণাটা উঠতো তখন ছটফট করতে করতে চোখের জল ফেলে করজোড়ে আকাশের পানে হাত তুলে বলতো- "আমার আর সহ্য হচ্ছে না, আর কষ্ট দিও না!"
তার এমন করুণ দশা দেখে সবাই কেঁদেছে, আমিও কেঁদেছি; মনের অজান্তে চোখের জল ফেলেছি!
ছোটনের এমন অবস্থা দেখে তার দাদা-দাদী আর চুপ থাকতে পারেনি। নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দেখাশোনা করতে লাগলো। চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহীতে ছোটাছুটি করতে লাগলো। জমানো টাকা-পয়সা,এমনকি জমি পর্যন্ত বিক্রি করলো তার চিকিৎসার জন্য, কিন্তু কোনো ফল পেল না! ওষুধ খেয়ে কমে বটে কিন্তু সুস্থ হয় না, হবেও না কোনদিন! উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো আংশিক সুস্থ হবে, যন্ত্রণার প্রকোপ কমে হয়তো একটু আরাম পাবে কিন্তু সে চিকিৎসা করানোর মতো কোনো মোটা অংকের অর্থ তাদের নেই। ওর দাদি মাঝে মাঝে ওকে কোলে করে অথবা ভ্যানে করে বিশিষ্ট লোকদের শরণাপন্ন হতো। কোথাও কিছু পেতো, কোথাও টাকাবিহীন উপদেশ নিয়ে বাড়ি ফিরতো। সেগুলো দিয়ে কোনরকম চিকিৎসা চলতো। ঢাকার বড় ডাক্তার নাকি বলেছে, ওর পা কেটে ফেলতে হবে! এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই! যদি তাতে সংশয় থাকে তবে অন্যত্র বা দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে।
চিকিৎসা যেটাই করুক না কেনো তার জন্য প্রয়োজন অর্থের, যেটা বর্তমানে তাদের নেই। ছোটনের দাদা-দাদি চিকিৎসার অর্থ জোগাতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই বাকি রাখেনি। যদি সেটুকু বিক্রি করে দেয়,তবে দেশের ভূমিহীন যাযাবর জাতির সংখ্যাটা একটু বেড়ে দাঁড়াবে। এর জন্য প্রয়োজন কিছু সংখ্যক হৃদয়বান লোকের উপস্থিতি ও আগমন, যাদের ভেতরে দয়া-মায়া, মমতা, স্নেহ,সহানুভূতি, উদারতা মহানুভবতা এবং অন্যের উপকারের প্রতি আত্ম গভীরতার অন্তরদৃষ্টি আছে,যারা এমন দুস্থ পরিবারের বিপদে এগিয়ে আসবে। এত বড় দেশের এত বড় জনগোষ্ঠীর ভেতরে এমন লোকের উপস্থিতি কি সত্যিই দুর্লভ?
মাঝে মাঝে ছোটনের দাদি ওকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে গল্প করতে আসতো। জীবন খাতার খেদের কথাগুলো তুলে ধরতো।মনটা ভীষণ খারাপ লাগতো। একদিন শুনলাম, ছোটনের মা নাকি বিষ খেয়ে মারা গেছে! পরকীয়া প্রেমের জগতে বিজয়ী হলেও সংসার জগতে পরাজয়ের স্বাদ হয়তো মেনে নিতে পারেনি, তাই বুঝি জীবনের গ্লানি মুছে ফেলে আত্মহনের পথ বেছে নিলো। হয়তো সন্তানের জন্য কিংবা জগতের অনাচার সহ্য হয়নি,তবে ওই সময় মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের মাতৃত্ব অবশ্যই জেগে উঠেছিল। সে নিশ্চয়ই ভীষণভাবে অনুভব করেছিল ছোটনের অসহায়ত্বকে, তার একাকীত্বকে! আমরা কি কখনো পারব ওই মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের হৃদয়ের বেদনা উপলব্ধি করতে? পারব না! ওই মা কেনো পালিয়ে যাবার সময় সন্তানকে এমন ভাবে অনুভব করল না, তাহলে তারও এমন একটা অপমৃত্যু ঘটতো না, ছোটনের পৃথিবীটাও অন্যরকম হতে পারতো। বেচারা! অভিমানে পৃথিবীটাকেই অতীত করে ফেললো।
যাক সে কথা, ছোটন একটু আধটু গান জানে, মাঝে মাঝে আমাকে গেয়ে শোনাতো। আমার খুব ভালো লাগতো। জানিনা ওর জন্য কিছু করতে পারব কিনা? মাঝে মধ্যে ও আমাকে বলতো- আমার অসুখ ভালো হবে তো কাকা? আমি খেলতে পারবো তো? আমি কি আবার স্কুলে যাবো?
মিথ্যা সান্ত্বনা ছাড়া আমার মত নগণ্য ব্যক্তির পক্ষে আর কিবা দেওয়া সম্ভব! তবুও বলতাম- তুমি অবশ্যই ভালো হবে, তুমি আবার আগের মত স্কুলে যাবে!
ও বলতো- জানেন কাকা, আমার হাঁটুতে যখন পুঁজ জমে, তখন ভীষণ কষ্ট হয়, খুব যন্ত্রণা করে!
শুনে আমার মনটা খুব ব্যথিত হতো।
ওর দাদী আমার হাত ধরে কাঁদতো আর বলতো- বাবা আমার ছেলের জন্য কিছু একটা করো ?জানোতো ওর মা নাই, বাবা থেকেও নাই! এখন সব দায়িত্ব ঝামেলা আমার। ওর চিকিৎসা করাতে করাতে বাড়িটুকু ছাড়া আর কিছুই নাই! এখন আমি কি করবো বলো - বলেই চোখের জল ফেলে কাঁদতে লাগতো।
আমি মনে মনে বলতাম,এভাবে না কেঁদে ওই উপরওয়ালাকে সাকার রুপে পৃথিবীতে আসতে বলো আর আসলেই ওর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে তোমার মিনতি নিবেদন করো! যতক্ষণ হ্যাঁ বলবে না, ততক্ষণ পা ছাড়বে না! ও না দিয়ে যাবে কোথায়!
বিধির লিখন, না যায় খন্ডন! তিনি যদি পৃথিবীতে এসে ছোটনদের দুঃখ ঘুচাবেন, তবে এত সুন্দর মানুষগুলোকে বুদ্ধি বিবেক দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেন কেনো? জানিনা তিনি ছোটনের কপালে কি লিখে রেখেছেন! হয়তো যে গল্পে ভালোবাসা নেই,সেই গল্পের নায়কদের মাধ্যমে স্রষ্টা আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন,নেবেন। হয়তো স্রষ্টা দেখতে চান তারই দেওয়া ইচ্ছাশক্তিকে আমরা কতটা মনুষ্যত্ববোধ তথা মানবিক কাজে ব্যবহার করছি।
আমি ছোটনকে একটি প্রতিবন্ধী সংগঠনে ভর্তি করে দিয়েছিলাম যাতে ভবিষ্যতে যদি তার কল্যাণ নিহিত হয়। কিছু অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলাম, তার সাথে কিছু বিবেকবান সত্যপূর্ণ সত্তার খোঁজে প্রচারণা চালিয়েছিলাম। জানিনা কেন সফল হলাম না? তবে সামর্থ্যের সবটুকু চেষ্টা করেছিলাম। আমরা মানুষ, আমাদের বোধশক্তি আছে, অনুভূতি আছে; সেই অনুভূতির চোখটা একবার খুলে দেখি, ছোটনের মতো যারা আছে তাদের জন্য কিছু করার আছে কিনা! পৃথিবীতে তো একবারই জন্ম নেবো তবে এমন মানব জীবনকে কেনো অসার্থক করবো? সংকীর্ণতা আর কৃপণতা করে কেনো আপন চিত্তকে অসার্থক করবো, সংকুচিত করবো? মানুষ যখন কোনো মহৎ কাজ করে তখন মানুষ মানুষ থাকে না, তার ভেতর ঈশ্বরীয় ভাব চলে আসে।নূরের আলোয় আলোকিত হয় তার মন প্রাণ, চিন্তা চেতনা, অনুভূতি।
আমরা হয়তো ছোটনকে সুস্থ করতে পারবো না কিন্তু কিছুটা হলেও তো মানসিক শান্তি দিতে পারবো, সাহস আর উৎসাহ দিয়ে চলার পথে অগ্রগামী করতে পারবো, জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা সৃষ্টি করাতে পারবো,ভবিষ্যতের দিনগুলোতে সংগ্রাম করে বাঁচার প্রেরণা জোগাতে পারবো। সিদ্ধান্তটা আমাদের, ভাবনাটাও আমাদের! আমরা কোনটা চাইবো- ছোটন আস্তে আস্তে ক্ষয়জাত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাক অথবা কোনো হুইল চেয়ারে বসে কিংবা হামাগুলি দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটা দেখিয়ে বলবে- "মা দুটি ভিক্ষা দেন, দু'দিন ধরে কিছু খাইনি, একটু দয়া করুন" নাকি ভবিষ্যতের একজন তরুণ প্রতিবন্ধী, যে হস্তশিল্পে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে অথবা ছোট কোনো দোকানে বসে সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহ করছে?আমরা কোনটা চাইবো, তার ভিক্ষাবৃত্তি নাকি সমাজের স্বাভাবিক মানুষের স্বীকৃতি ?
আমরা যদি চেষ্টা করি,মনের উপর যদি একটু জোর লাগায়, তবে অল্প কিছু ছাড় দিয়ে কিংবা ছোট ছোট স্বপ্ন বা শখের ঋতুকালীন মৃত্যু ঘটিয়ে অথবা বাজে খরচের দীর্ঘায়ুকে স্বল্প আয়ের উৎস করে সাশ্রিত অর্থগুলো ছোটনদের মতো অসহায় যারা, তাদের কল্যাণে ব্যয় করতে পারি। তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের 'অ'কে ছেঁটে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারি । আমরা চাইলেই ছোট ছোট ভালবাসার গল্প তৈরি করতে পারি। যে গল্পে ভালোবাসা নেই, সেই গল্প ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারি।
যদি মানুষের দুঃখ দেখে প্রাণ না কাঁদে,ভেতরের আমিত্ব না জাগে, হৃদয়ের টানে ছুটে না আসে তবে কোথায় থাকবে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ, আত্মবোধ ? কাজেই আত্মবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে, হৃদয়ের ভেতর সৃষ্টি করতে হবে সাদা মনের মানুষ! আমরা তো সবাই নিজ নিজ চিন্তায় ব্যস্ত, একবার চোখ বন্ধ করে একটু ভাবি, ছোটনের মতো কারো স্থানে নিজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলি, নিজের প্রতিবন্ধী জীবন কতটুকু অসহায় তা উপলব্ধি করি! তাহলে বোধহয় ছোটনের মতো কাউকে দেখলে হৃদয়ে মায়া জাগবে,ভালোবাসা জাগবে!
বর্তমানে যারা তরুণ,তারা ভবিষ্যতের প্রবীণ। আমরা যারা তরুণ, আমাদের স্থানে একদিন প্রতিনিধিত্ব করেছিল আজকের প্রবীণরা। জানিনা তারা কতটুকু সার্থক হয়েছিল কিন্তু আমরা তাদের ছাড়িয়ে যেতে চাই। আমাদের অনাগত প্রজন্মকে সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দিতে চাই, যেখানে ছোটনদের মতো কেউ পোলিও বা পঙ্গুত্বের রোগে ভুগবে না। অনিশ্চিত হবে না তাদের ভবিষ্যত, যেখানে থাকবেনা কোনো ভালোবাসাহীন গল্প। এসো তরুণ, আমরা আমাদের তারুণ্য দিয়ে পৃথিবী জয় করি, এ পৃথিবীকে আমাদের নিকট ঋণী করে রাখি। এসো নবীন-নবীনা, কবির মত আমরাও হাতে রেখে হাত, গেয়ে উঠি আজ-
এসেছে নতুন শিশু,
তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান,
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাবো তবু,
যতক্ষণ আজি দেহে আছে প্রাণ,
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ডিএসএস/