ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগের সুনাম ছড়িয়ে যাক দেশে-বিদেশে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন মনিরা পারভীন
বেশ কয়েক বছর আগে জাহাঙ্গীরনরের একটি গ্রুপে দেখলাম তার জন্ম দিন। শুভেচ্ছা জানালাম নিজের পরিচয় দিয়ে। তিনিও বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বললেন। কথা শেষে বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে আমার সঙ্গে দেখা কর। আমি তার ফোন নম্বর নিয়ে রাখলাম। মাঝে মাঝে ফেজবুক ম্যাসেনজারে কথা বলতাম। একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা করেছি। সর্বশেষ দেখা হয় করোনার আগে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। করোনার মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। ফেসবুকে তার শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম দেখে ভাবতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমনই হওয়া প্রয়োজন। এতক্ষণ বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহকারী অধ্যাপক মনিরা পারভীনের কথা।
দুই দিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫১ বছরে পদার্পণ করল। বিশ্বিবদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থী সুনামের সঙ্গে কাজ করছে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিনিয়র বা জুনিয়র ভাই বা আপুদের ভালো খবর আমাকে পুলকিত করে। বিশ্বিবদ্যালয়ের ৫১ বছর পূর্তির আমেজের মধ্যে ভীষণ আনন্দের একটি খবর পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন মনিরা পারভীন ম্যাডাম।
খুলনার মেয়ে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মনিরা পারভীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) পড়াশোনা শেষ করে ভারত সরকারের আই.সি.সি.আর.-এর বৃত্তি নিয়ে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০০৯-২০১৪) নৃত্য বিভাগ থেকে স্নাতকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় এবং স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তরের সর্বোচ্চ সাফল্যের কারণে তিনি স্বর্ণপদকসহ নীরদ বর্মণ স্মৃতি পদক, অসিত চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পদক ও সুনিত বসু স্মৃতি পদক লাভ করেন।
ভারতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি গুরু শ্রী সন্দীপ মল্লীকের কাছে নৃত্য প্রশিক্ষণ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তার কাছে শিখছেন। এ ছাড়াও তিনি ৫ বছর পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ও শ্রীমতী শাশ্বতী সেনের কাছে নাচের তালিম নেন। ১৯৯৫-২০০৩ পর্যন্ত তিনি খুলনায় উদীচীতে মোস্তাক সেলিম পপলুর কাছে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ২০০৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়’ কথক ও সৃজনশীল নৃত্যে দুইটি স্বর্ণপদক পান। তিনি ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নীপার কাছে নৃত্যের তালিম নেন। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলা ভিশন, এনটিভি, এসএটিভি, এটিএন, চ্যানেল আই, মাছরাঙা, যমুনা টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন ও আরটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে নৃত্য পরিবেশ করেন।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৫ সালে ৫ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ৮ মার্চ সকাল ৯টায় সর্বপ্রথম ১০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নেন। তিনি একাধারে শিক্ষক ও নৃত্যশিল্পী। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি নিয়মিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নেন। নৃত্য পরিবেশনের পাশাপাশি তার রয়েছে বিভিন্ন নৃত্য বিষয়ক গবেষণা। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সদস্য।
নৃত্যকলা বিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর মনিরা পারভীন বলেছেন,নৃত্যকলা বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন করা হবে তার একমাত্র লক্ষ্য। এ বিভাগের পরিচিতি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বদরবারে তুলে ধরার প্রত্যাশা করেন।
আমাদের বিশ্বাস তার মতো একজন গবেষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক নৃত্যকলা বিভাগকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃত্যকলা বিষয় পড়াতে তিনি উদ্যোগী হবেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি অল্প সময়ে নৃত্যকলা বিভাগে সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ তৈরি করতে মনিরা পারভীন ম্যাম বিশেষ ভূমিকা রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। দেশীয় সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের সুনাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে যাক সেটাই প্রত্যাশা।
মো. শাহিন রেজা,
সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।