বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ এবং গণআকাঙ্ক্ষা
ইতিহাস বলে পৃথিবীর সর্বত্র অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে মেহনতী, নিপীড়িত এবং নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতা-অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী আন্দোলন সদা বহমান। আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া কখনো কোনো মানুষ, সমাজ বা জনপদ স্বাধীন হতে পারেনি, অধিকার আদায় করতে পারেনি।
স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম অধিকার। অধিকার আদায়ের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এই অধিকার এমনি-এমনি আসে না, আদায় করে নিতে হয়। আবার অধিকার আদায়ের পথ কখনো মসৃণ-স্বল্প হয় না। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কেউ সানন্দে জীবন বিলিয়ে দেয়, আবার কখনো অন্যের জীবন কেড়েও নেয়। ইতিহাসের পাতায়-পাতায় অধিকার আদায়ের এমন বিচিত্র পথপরিক্রমা চোখে পড়ে। কখনো-কখনো অধিকার আদায়ের ভাষা এতই ভয়ংকর হয়ে ওঠে যে- পাল্টে দেয় ভূমানচিত্র, বিপ্লব ঘটায় বিস্তৃত সমাজে, প্রভাব বিস্তার করে পুরো বিশ্বে। অধিকার আদায়ের চূড়ান্ত রূপই আন্দোলন। কোনো যৌক্তিক দাবিতে যখন কৃষক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বসাধারণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়, তখনি সেটা গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
তেমনি কয়েকটি বিশ্ব কাঁপানো গণআন্দোলন হলো-(১) প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন (১৫১৭-জর্মান)। (২) বোস্টন টি পার্টি (১৭৭৩-আমেরিকা)। (৩) বাস্তিল দুর্গের পতন (১৭৮৯-ফ্রান্স)। (৪) মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ (১৯৩০-ভারতবর্ষ)। (৫) মার্চ অন ওয়াশিংটন (১৯৬৩-আমেরিক)। (৬) বার্লিন প্রাচীর (১৯৮৯-জার্মান)। (৭) ইরাক যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ (২০০৩)। (৮) অরেঞ্জ বিপ্লব (২০০৪-ইউক্রেন)। (৯) আরব বসন্ত (২০১০)। (১০) ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (২০১৩-আমেরিকা)।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে গণআন্দোলনের সুদীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। ভারতবর্ষ স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য গণআন্দোলনগুলো হলো-(১) ভারত ছাড়ো আন্দোলন- (১৯৪২ সাল), (১৯৪২ সাল ৮ আগস্ট থেকে ১৯৪৩ সাল)। (২) মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ (১৯৩০ সাল)। (৩) আইন অমান্য আন্দোলন- (১৯৩০ সাল), (১৯৩০ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল এপ্রিল)। (৪) স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৫ সাল), (১৯০৫ সাল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে ১৯১১ সাল)।
১৯৭১ সাল ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্টের জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর নয় মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সাল ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট সংকট, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো অসংখ্য সমস্যার মুখোখুখি হয়। ১৯৯০ এর গণআন্দোলনে স্বৈরাচার হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পতন হয়। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া এর নেতৃত্বে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। দেশে আপেক্ষিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচিত হয়।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বৃটিশ-পাকিস্তান ঔপনিবেশিক আমল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী এই দুটি পর্যায়ের গণআন্দোলনের মৌলিক বিষয় স্পষ্টতই ভিন্ন। সময় গড়িয়েছে কিন্তু সময়ের সাথে আমাদের সমাজ-রাজনীতি-রাষ্ট্র কাঠামো সুদৃঢ় হয়নি। ফলে উল্লিখিত দুটি ঔপনিবেশিক আমলের মতোই এখনো রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণ নিস্পেষিত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর বিরোধী আক্রমণাত্বক সম্পর্ক। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দেশে ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা পূর্বাপর উল্লেখযোগ্য গণআন্দোলনগুলো হলো-(১) ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন (১৯৫২ সাল), (১৯৪৮ সাল ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৫৬ সাল)। (২) ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান (১৯৬৮ সাল নভেম্বর/ ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯ সাল ৪ জানুয়ারি/ ২৬ ফেব্রুয়ারি)। (৩) লং মার্চ (১৯৭৬ সাল)। (৪) ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন (১৯৮৩/১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯০ সাল ৬ই ডিসেম্বর)।
২০০৮ সাল ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে ফখরুদ্দীন, মঈনউদ্দীন এর আঁতাতে দেশে একটি ষড়যন্ত্রের সরকার প্রতিষ্ঠা পায়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সাল ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সাল ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বিহীন, ১৫১ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত, দিনের ভোট রাতে এমন সব অস্বাভাবিক ঘটনার মধ্য দিয়ে কার্যত একটি অবৈধ সরকার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে।
দিন যত গিয়েছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার ততই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলা করে সমাজে নৈরাজ্য ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। দেশের হাজার-হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, চাকরি নেই, কৃষকের ফসলের মূল্য নেই। শিশু নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, গুম, খুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এসবের প্রতিবাদে বিএনপি সবসময় সোচ্চার থেকেছে।
সারা দেশে অসহনীয় লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি'র দেশব্যাপী জেলা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ৩১-০৭-২০২২ ভোলা জেলায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ভোলা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. আব্দুর রহিম মাতব্বর এবং ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নূরে আলম-কে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। তখনই দেশের মানুষ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ফুঁসে ওঠে। বিএনপি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। চলমান এই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন- আব্দুল আলিম, শাওন প্রধান, শহিদুল শাওন, কামাল, তানু ভূঁইয়া, অনিক, ইউসুফ, নয়ন সহ আরও অনেকে।
উল্লিখিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে- ০৮-১০-২০২২ শনিবার চট্টগ্রাম, ১৫-১০-২০২২ শনিবার ময়মনসিংহ, ২২-১০-২০২২ শনিবার খুলনা, ২৯-১০-২০২২ শনিবার রংপুর, ০৫-১১-২০২২ শনিবার বরিশাল, ১২-১১-২০২২ শনিবার ফরিদপুর, ১৯-১১-২০২২ শনিবার সিলেট, ২৬-১১-২০২২ শনিবার কুমিল্লা, ০৩-১২-২০২২ শনিবার রাজশাহী গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১০-১২-২০২২ শনিবার ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশ বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন যুগ্ম-মহাসচিব সমন্বয় করেছেন। সমাবেশের পূর্বে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা; ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিকদল, মৎসজীবী দল, মহিলাদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এর নেতৃত্বে বিভাগীয় শহরে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে প্রস্তুতি সভা করেছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই না, সমাবেশের দুই-তিন দিন পূর্ব থেকে সভাস্থলে উপস্থিত থেকে নেতা-কর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। সমাবেশের পূর্বে গভীর রাত পর্যন্ত নেতৃবৃন্দ মঞ্চে বক্তৃতা দিয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন, মনোবল চাঙ্গা রেখেছেন। জাসাসের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, গান গেয়ে উজ্জিবিত রেখেছেন। এমনকি মঞ্চের পাশে তাবুতে রাতযাপন করেছেন।
একইভাবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকবৃন্দ সংশ্লিষ্ট মহানগর, জেলা নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে জেলাগুলোতে গিয়ে সভা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, লিফটের বিতরণ করেছেন, হাটবাজার-স্টেশনে গণসংযোগ করেছেন, কেন্দ্রের নির্দেশমতো তাদের সহযোগিতা করেছেন। জেলা নেতৃবৃন্দ উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ল্ড এবং উপজেলা নেতৃবৃন্দ ইউনিয়ন কমিটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
সকল প্রস্তুতির পরও ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা বিভাগ ছারা অন্য সকল বিভাগীয় গণসমাবেশের কোথাও একদিন কোথাও দুইদিন পূর্বে আওয়ামী লীগ সমর্থিত "জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি" বিভাগের সর্বত্র বাস ধর্মঘট ডেকেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বাস ধর্মঘট ডাকলেও পুলিশ মিনিবাস, ট্রাক, পিকাপ, লঞ্চ, ট্রলার, ফেরি চলতে দেয়নি। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায়-রাস্তায় তল্লাশি করেছে, ঠুনকো অজুহাতে মামলা দিয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে, যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে, হয়রানি করেছে। হোটেল সিট বরাদ্দ বাতিল করেছে।
কিন্তু দেশের মানুষ কোনো বাধাই মানেনি। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্ক, মামলা, আওয়ামী লীগের হামলা, হুমকি-ধমকি, অচল যোগাযোগ ব্যাবস্থা, রাস্তায় তল্লাশি, হয়রানি, এত-শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও মুক্তিকামী লক্ষ মানুষের এই সমাবেশ, হৃদয় নিংড়ানো সমর্থন, গগন ফাটানো স্লোগানে সারা শহর প্রকম্পিত।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় এই গণসমাবেশের প্রস্তুতি পর্ব থেকে শুরু করে গণসমাবেশ সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু তাই না, এই কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ইউনিয়ন-ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির সকল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে নব-সংযোগ স্থাপিত হয়েছে, সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে, ভাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়েছে। কার্যত সকল পর্যায়ে রাজনৈতিক বুনন, সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, শিষ্টাচার চর্চার মধ্য দিয়ে সারা দেশে একটি সফল রাজনৈতিক কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে।
সবকটি গণসমাবেশে নির্ভরযোগ্য নৃতৃবৃন্দদের নেতৃত্বে- আবাসন, ব্যাবস্থাপনা, শৃঙ্খলা, প্রচার ও মিডিয়া, অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন ইত্যাদি উপকমিটির মাধ্যমে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে।
গণসমাবেশগুলোর পরিকল্পনা প্রণয়ণ; পর্যায়ক্রমিক প্রস্তুতিসভা; সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধকরণ; বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে-মোকাবিলা করে- সহ্য করে নির্বিঘ্নে আসাযাওয়ার কৌশল আয়ত্ত করণ; খেয়ে না খেয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে একদিনের গণসমাবেশের জন্য দুই-তিন দিন উপস্থিত থাকতে প্রস্তুত করণ; গণসমাবেশস্থলে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র স্থাপন; গণসমাবেশের মঞ্চ ও মাঠে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করণ; মাঠে সাংবাদিকদের জন্য, প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও নারী নেত্রীদের জন্য পৃথক জায়গা নির্ধারণ করণ; গণসমাবেশের সৌন্দর্যবর্ধনে নানা রঙের ক্যাপ-টিশার্ট-বেজ ব্যবহার নিশ্চিত করা; গণসমাবেশের মূল বক্তব্য এবং দলের আদর্শ-উদ্দেশ্য প্রকাশে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিশ্চিত করা; বিভাগের বিভিন্ন জেলা, থানা থেকে আগত অগ্রগামী নেতৃবৃন্দদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা; কেন্দ্রীয় ও দূরবর্তী জেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দদের জন্য হোটেল ভাড়া করা; হাজার-হাজার নেতা-কর্মীদের সাধ্যমতো খাবারের ব্যাবস্থা করা; এত মানুষের খাবার সরবরাহ করার কঠিন কজটি ভিন্ন-ভিন্ন আঙ্গিকে করা হয়েছে। থানা ভিত্তিক, নির্বাচনী আসন ভিত্তিক, জেলা ভিত্তিক, সংগঠন ভিত্তিক ইত্যাদি গ্রুপে পৃথকভাবে মাঠে রান্না করে ওয়ানটাইম প্লেটে খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আবার পূর্ব থেকে হোটেলে অর্ডার দিয়ে প্যাকেট খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গণসমাবেশে আধুনিক এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রশিক্ষণ ও এর বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়েছে।
গণসমাবেশগুলো নির্দিষ্ট বিভাগীয় হলেও এখানে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগের নেতা-কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া, একদিনের সমাবেশ দুই তিন দিন ধরে চলেছে। ফলে গণসমাবেশের সাভাবিক বৈশিষ্ট্য বদলে সারা দেশের জাতীয়তাবাদী আদর্শের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মানুষও তাদের ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন। সাধ্যমতো আপ্যায়ন করেছেন, মূল্যায়ন করেছেন। অনেকেই হোটেলে সিট না পেয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই, যে আত্মীয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা নেই তাকে ফোন দিয়েছেন। সে হোটেলের ব্যবস্থা করেছেন। না হয় তার বাসায় থাকার ব্যাবস্থা করেছেন। কোনো অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সমাবেশস্থলের চারপাশের চা-নাস্তা-খাবারের দোকানগুলোও সার্বক্ষণিক খোলা রেখেছে। ভ্যান-রিক্সা-ঠেলাগাড়িগুলো দিনরাত চলেছে। এক কথায় আওয়ামী পোস্টধারী নেতা আর অতি উৎসাহী পুলিশ ছাড়া সবাই এই গণসমাবেশকে সমর্থন করেছে, সফল করেছে।
প্রতিটি ইউনিট কমিটিকে দেওয়া দলীয় সহযোগিতার বাইরে প্রত্যেক সংসদীয় এলাকা থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী, গত নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী নিজ এলাকার নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসা যাওয়া, সাধ্য মতো খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। নিজের ছবিযুক্ত টিশার্ট, ক্যাপ, পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, বিলবোর্ড, তোরণ করেছেন।
শেষ দিকের সমাবেশগুলোতে মাঠের চারপাশে মেলার আঙ্গিকে তিনপাশে ও উপরে ডেকোরেটরের কাপড়ের ছাউনি দিয়ে অনেকগুলো প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোতে ভিন্ন-ভিন্নভাবে দুই তিন দিন ধরে বিভিন্ন থানা বিএনপি, জেলা বিএনপি, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সেবা সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন, সমাবেশের দায়িত্বশীল বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ অবস্থান করেছেন, খেয়েছেন, বিশ্রাম নিয়েছেন।
১২-১১-২০২২, শনিবার বিএনপি'র ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ মাঠে নির্মিত প্যান্ডেলের নিচে স্থানসংকুলান না হওয়ায় বাইরে খোলা আকাশের নিচে, বাতাস, কুয়াশার মধ্যে হাজার-হাজার মানুষ চট-চাটাইয়ের উপর পাতলা চাদর ও কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে-বসে রাত কাটিয়েছেন। মাঠে কয়েকশ মানুষ এভাবে পাতলা চাদর ও কম্বল মুড়িয়ে শোয়ার পর বড় পলিথিন দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে।
গণসমাবেশের জনসম্পৃক্ততা, সার্থকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর মন্তব্যের জবাবে, বিএনপি'র ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম তার বক্তব্যে বলেন- কিছুদিন পূর্বে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে, শতকোটি টাকা বাজেট করে, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে, ইউএনও-ডিসি-এসপিদের ব্যাবহার করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু উদ্বোধনে যত লোকের সমাগম হয়েছিল, আজকের গণসমাবেশে তার কয়েকগুণ বেশি মানুষ দুইদিন ধরে উপস্থিত।
ফরিদপুরে সমাবেশস্থলটি শহরের ৪-৫কিলোমিটার বাইরে হওয়ায় এর সার্বিকতা স্পষ্টতই চোখে পড়েছে। সম্পূর্ণ মাঠ ভরে, দুই পাশের পাকা রাস্তা, একপাশে স্কুলের ছাদ কোথাও তিল ধরার জায়গা ছিল না। মাঠের বামপাশ ঘেসে মঞ্চের পেছনের দিকে মেহগনি গাছের ছায়াঘেরা রাস্তায় এক কিলোমিটার লোকে লোকারণ্য। রাস্তার দুই পাশে সবগুলো ঘরের বারান্দা, উঠোনে চেয়ার-বেঞ্চ ভরে আছে মানুষ।
সবকটি রাস্তায় অসংখ্য অস্থায়ী পিঠার দোকান, চায়ের দেকান, নাড়ু-আচার-ঝালমুড়ির দোকান, ডাব বিক্রির ভ্যানে সারাক্ষণ মানুষের ভিড়। সমাবেশ মঞ্চের পেছনে রাস্তার বিপরীতে অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রায় ২০টি চুলায় সারাদিন-রাত রান্না হয়েছে। যে যার প্রয়োজন মতো খাবার নিতে পেরেছেন। মাঠে অনেকে ফেরি করে বাদাম-পেয়ারা বিক্রি করছে। অনেকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউট রহমান-বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান এর মুখচ্ছবি, বিএনপি'র মনোগ্রাম খচিত রঙ্গিন ব্যাচ এবং ব্যান্ড বিক্রি করেছে।
প্রতিটি গণসমাবেশকে পন্ড করতে আওয়ামী লীগ নিত্যনতুন অপপ্রচার করেছে, পুলিশ সমানতালে অপতৎপরতা চালিয়েছে। বিএনপি'র রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে পুলিশের তৎপরতা পূর্ববর্তী সমাবেশগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক পরিলক্ষিত হয়েছে। সমাবেশের পূর্বাপর চারপাশের রাস্তারমোড় এবং মাঠের প্রবেশপথে পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপি'র রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের নির্ধারিত "রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা মাঠ"এ ০২-১২-২০২২ শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের পুলিশ ঢুকতে দেয়নি।
এজন্য দুইতিনদিন পূর্ব থেকে "রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা মাঠ" সংলগ্ন পুকুরের দক্ষিণ পাশে "হযরত শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠ"এ প্যান্ডেল নির্মাণ করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। "হযরত শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠ"টি "রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠ"র দক্ষিণে পুকুর পার থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। মাঠে পূর্ব-পশ্চিমে ছয় লাইনে ৬০টি প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী গণসমাবেশে এপর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্যান্ডেল নির্মিত হয়েছে। "রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা মাঠ" এবং "হযরত শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠ" ভরে মাঠের চারপাশের রাস্তাগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভির। এ ছাড়া "হযরত শাহ মখদুম ঈদগাহ মাঠ" সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর ঘেসে বেড়িবাঁধ, লালনশাহ পার্ক মুক্তমঞ্চ, সীমান্ত নোঙর ক্যানটিন, নোঙর ক্যানটিন পর্যন্ত মানুষের সমাগম ছিল।
রাজশাহী গণসমাবেশ মাঠেও অনেকগুলো গ্রুপে রান্নার আয়োজন হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, এসএম জিলানী নিজ খরচে কেনাকাটা করে, নিজে খিচুড়ি রান্না করেছেন। রাত ১২টায় রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের প্যান্ডেলে কেন্দ্রীয়, মহানগর এবং বিভিন্ন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে খেয়েছেন।
সত্যি রাজশাহী পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার শহর, শিক্ষার শহর, শান্তির শহর। বিএনপি'র রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে আগত অগনিত মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনের সুন্দর ব্যবস্থা তাই প্রমাণ করে- লালনশাহ পার্ক মুক্তমঞ্চের দক্ষিণে পদ্মা নদীর চরে মল ত্যাগের জন্য চার লাইনে ৭২টি এবং মূত্র ত্যাগের জন্য এক লাইনে ১৮টি অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন এবং পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সরকারের কবল থেকে মানুষ ও দেশকে মুক্ত করে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজে শান্তি-সাম্য-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করছেন। তিনি সময়ের সাহসী ও দ্রুব সত্য কন্ঠে শ্লোগান দিয়েছেন- "বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে"। "টেক ব্যাক বাংলাদেশ"। কালজয়ী এই শ্লোগানে বিশ্বাসী হয়ে চলমান গণসমাবেশে লক্ষ-লক্ষ জনতার উপস্থিতিকে ঘিরে অনেক স্মৃতিময়, ব্যাতিক্রমী ঘটনা মানষ পটে চির অম্লান হয়ে থাকবে। যেমন-ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে "মিল্টন বৈদ্য" কয়েকশত নারী-পুরুষের একটি বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন। এই দলে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক নারী ছিলেন। মিছিলটি রঙিন ক্যাপ, ব্যানর- ফেস্টুেনে সজ্জিত ছিল। মিছিলে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা হাতে শাঁখা, কপালে সিঁদুর, সেলোয়ার-কামিজ, লাল-হলুদ-সবুজ-নীল রঙের জমিতে নকশাকরা শাড়ি পরে; ছেলেরা শার্ট-পেন্ট, ধুতি-পাঞ্জাবী পরে; ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে অংশগ্রহণ করেছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় তারা মাদারীপুর জেলার রাজৈর থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ ভ্যান-রিক্সা-সাইকেল, কখনো পায়ে হেটে দুইদিন আগে সমাবেশে এসেছেন। মিছিলটি মাঠে প্রবেশের সময় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মঞ্চ থেকে মাইকে তাদের মুহুর্মুহু স্লোগানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে ৮৫ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে যোগ দিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা, কালীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির দুইজন নিবেদিত প্রাণ। তারা হলেন-কালীগঞ্জ পৌর কৃষক দলের সাবেক সভাপতি- ফোরকান আলী এবং কৃষক দলের কর্মী মিজানুর রহমান। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বলিদাপাড়া থেকে বাইসাইকেলে করে রওনা দিয়ে তাদের সাইকেলে ধানের শীষ ও বিএনপি'র খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এর ছবি ঝুলিয়ে সড়ক পথে শনিবার দুপুরে খুলনায় পৌঁছান। এবং গণসমাবেশ শেষে আবারও সাইকেল চালিয়ে শনিবার রাত ৮টায় যশোর ফিরেছেন।
বরিশাল নৌবন্দরের পাশে চরকাউয়া পয়েন্টে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম খেয়া। সেই খেয়া পারাপার শুক্রবার থেকে বন্ধ ছিল। তাই কীর্তনখোলা নদীর ওপারের ইউনিয়নগুলোর মানুষ বরিশাল আসতে পারছিল না। শনিবার সকালে বিএনপি'র অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী সেই কীর্তনখোলা নদী কলাগাছের ভেলায় এবং সাঁতরে পার হয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রদলের কর্মী সবুজ তালুকদার। সে বাকেরগঞ্জের গোমা থেকে শনিবার ভোররাতে রওনা দিয়ে পায়ে হেঁটে সকাল ৮টার দিকে চরকাউয়া খেয়াঘাটে পৌঁছান। এখানে ফেরি না পেয়ে সবার সঙ্গে সাঁতরে নদী পার হয়ে সমাবেশে যোগ দেন। কীর্তনখোলা নদীর বরিশাল প্রান্তে তাদের জন্য পোশাক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দলের নেতারা। সেই পোশাক পরে তারা সমাবেশস্থলে যোগ দিয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে একজন বৃদ্ধ ৩৫কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে এসেছেন। একজন ক্র্যাচে ভর করে সমাবেশে এসেছেন। সমাবেশে আসার পথে অনেক রিক্সাচালক-ভ্যানচালক বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়নি। অনেক ডাব বিক্রেতা বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
এই সফল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের চোখেমুখে, চালচলনে চূড়ান্ত পদক্ষেপ, সর্বোচ্চ অবদান, সর্বশেষ ত্যাগের প্রতিভূ ফুটে উঠেছে। সবকটি গণসমাবেশে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য ও প্রত্যশা থেকে অর্জিত সমর্থন, অভিজ্ঞতাকে পুজি করে, সকল বাধা-ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে, ভয়কে জয় করে, সরব উপস্থিত থেকে, আসছে ১০-১২-২০২২ শনিবার বিএনপি'র ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে সফল করতে হবে। অপরাপর সমাবেশগুলোর জনসম্পৃক্ততার চিত্র অবলোকনে ঢাকা বিভাগ বিশেষ করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, ঢাকার পার্শবর্তী জেলা নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের সম্পৃক্ততাকে প্রাধান্য দিয়ে, দলের আদর্শকে মূল্যায়ন করে, রক্ত দিয়ে-জীবন দিয়ে হলেও এই কাঙ্ক্ষিত কর্মসূচিকে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার এটাই মুখ্য সময়।
লেখক: শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা) এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা