সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না
গত ৯ জানুয়ারি ২০২২ ইংরেজি তারিখ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতায় কান্নারত একজন কন্যা শিশুর ছবি প্রকাশ হয়। ওই কন্যা শিশুর পিতা বাদশা গাড়ির ধাক্কায় চাপা পড়ে নিহত হয়। গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজে এই নিহতের ঘটনা ঘটে। বাদশার বয়স ছিল মাত্র ৩২। কান্নারত শিশুর অমন ছবি দেখে আমি নিজেকে যেন নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছি না। আমার কলিজাটা যেন ফেটে যাচ্ছিল। চোখে অনবরত পানি আসছিল। আমি শিশুদের কষ্ট দুঃখ দেখতে পারিনা। আমার নিজের ছোট একজন কন্যা সন্তান আছে।
এভাবে আর কত শিশু ইয়াতিম হবে?
সড়কে দেশের নাগরিকরা প্রায় নিয়মিত হত্যার শিকার হচ্ছেন। এটাকে হত্যা না বলে উপায় নেই। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যায়না। এমন হত্যার শিকার পরিবারের লোকজন অসহায় হয়ে পড়ছেন। এমন হত্যার মাধ্যমে দেশে হাজার হাজার নারী বিধবা হয়েছেন। লাখ লাখ শিশু ইয়াতিম হয়েছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া দেশের সর্বত্র কাঁন্না আর কান্না। আমাদের স্বাধীনতার বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে। কেনো রাষ্ট্র আমাদের সড়কে শৃঙ্খলা দিতে অক্ষম? অন্তরায়টা কোথায়? বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে ২০২১ সালে আমাদের দেশে সড়কে নিহত হয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ জন। এ যেন কোন যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা। অন্য কোন দেশে কি সড়কে এতো মানুষ নিহত হচ্ছেন?
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটি মিডিয়ার কাছে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি'র এক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউট এর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যাটি রাজনৈতিক। কারিগরিভাবে এই সমস্যায় সমাধান করা সম্ভব নয়। যারা সড়কে বিশৃঙ্খলার সুবিধাভোগী,তারাই নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন কমিটিতে বসে আছেন।"
আমরা টিভির পর্দায় অনেক বাস মালিক সমিতির নেতাদের দেখি। তাদের অনেকেই দেশের বড় রাজনৈতিক দুটি দলের সঙ্গে যুক্ত। তাদের মালিকানার বাস গুলো রাস্তায় চরম বেপরোয়া গতিতে চলছে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে একজন বাস মালিকের বেশ ভালো সম্পর্ক। তিনি বাস মালিক সমিতির একজন বড় নেতাও। গত কয়েক বছরে তার বাস ব্যবসা যেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছে! প্রায়ই দেখি তার মালিকানার বাস বেপরোয়া গতিতে চলে অনেক মানুষকে হত্যা করছে। সিলেট অঞ্চলে তার মালিকানার বাসের ব্যবসার বিশাল প্রভাব। বি আর টি এ নিয়ে মিডিয়ায় এতো সমালোচনা। অথচ এই বি আর টি এ'কে সরকার দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেনি। দেশে ড্রাগের বিস্তার ঘটেছে। লাখ লাখ বাস, ট্রাক মিনিবাস, লেগুনা, প্রাইভেট কার, জিপের ড্রাইভাররা মাদকাসক্ত। ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন অনেকেই গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রাপ্ত বয়স হয়নি এমন অনেকেই গাড়ি চালাচ্ছে। অনেক ড্রাইভারগন ঘুমের জন্য সময় পাননা। যে কারণে গাড়ি চালানো অবস্থায় তারা ঝিমিয়ে পড়ছেন এবং দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। দেশে লাখ লাখ উগ্র তরুণের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সমাজ রাষ্ট্রই তাদেরকে এমন উগ্র হতে সহায়তা করেছে। এমন উগ্র উশৃঙ্খল তরুনরা মটর সাইকেল চালাচ্ছে চরম বেপরোয়া গতিতে। এটার মাধ্যমেও সড়কের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ সড়কের ফুটপাত বেদখল।
এসব কিছু বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারছি মূল সমস্যা রাষ্ট্রীয়। রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এসব মৃত্যুর মিছিলও থেমে যাবে।
রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। এখানে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি প্রধান অন্তরায়।
সাইফুল ইসলাম তানভীর
বারিধারা, গুলশান, ঢাকা
০১৭৩৯২৪৫০০৮