‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে প্রবাসীরা সোচ্চার’
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত নির্মম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে কানাডায় 'টরেন্টো ফিল্ম ফোরাম' এক গণসমাবেশের আয়োজন করে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আরও কয়েকটি সংগঠন ওই আয়োজনে অংশ নেয় l সেই গণসমাবেশ আয়োজনের প্রেক্ষাপট ও আগামীর পরিকল্পনা বিষয়ে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিকের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা নাজ শম্পা। নিচে এর চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো
ঢাকাপ্রকাশ: টরেন্টোতে গত ১ অক্টোবর কেন গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়?
মনিস রফিক: টরন্টোতে গত শনিবার (১ অক্টোবর) সমাবেশ আয়োজনের মূল কারণ ছিল, ৩ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে যে আলোচনা হয়েছে তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করা। এ বিষয়ে নৈতিক সমর্থন দেওয়া এবং জনগণকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করানো। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এই প্রথম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতম, বীভৎস, বর্বর গণহত্যাও জেনোসাইড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাঙালিরা সোচ্চার হয়েছে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।
ঢাকাপ্রকাশ: কানাডার টরেন্টোর গণসমাবেশের আয়োজক কোন সংগঠন? এতে কোন কোন সংগঠন অংশ নেয়?
মনিস রফিক: টরন্টোতে এই সমাবেশের আয়োজক সংগঠন ছিল টরন্টো ফিল্ম ফোরাম। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই সমাবেশকে সফল করার জন্য পিডিআই কানাডা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কানাডা, ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরাম, ছায়ানট, নাট্যসংঘ কানাডা, ম্যাক এন্টারটেইনমেন্ট, কানাডা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, অন্যমেলা টরন্টো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাপ্তাহিক ‘বাংলাকাগজ’ এবং প্রজন্ম ৭১ এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
তবে বিশ্বব্যাপী এ সমাবেশ আয়োজনের মূল সংগঠন হচ্ছে, নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ-BASUG, ‘আমরা একাত্তর’ এবং ‘প্রজন্ম ৭১’। সাবেক ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস নাসির উদ দুজা মূলত টরন্টো ফিল্ম ফোরামকে এই সমাবেশ আয়োজন করা জন্য আহ্বান জানান। এর প্রধানতম কারণ ছিল, গত ২০১৫ সাল থেকে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২৫শে মার্চের কালো রাত এবং ১৪ই ডিসেম্বরের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ৩০০০ ড্যানফোর্থ এলাকায় ’৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে সমাবেশ ও প্রদীপ মিছিল করে আসছে।
নাসির উদ দুজার মাধ্যমে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের প্রতিনিধি নিয়মিতভাবে ঢাকার আয়োজক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। বিশেষ করে ‘আমরা একাত্তর’ এর সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মাহাবুব জামান এর সঙ্গে সমাবেশের ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সমন্বয় করা হতো।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বিবেচনায় এই গণসমাবেশ সার্বিকভাবে কতটা সার্থক?
মনিস রফিক: এই সমাবেশ একটি সার্থক গণসমাবেশ। এর প্রধানতম কারণ, এখানে বিভিন্ন শ্রেণির এবং স্তরের মানুষের উপস্থিতি ছিল, সেই সঙ্গে এই সমাবেশে উপস্থিতির সংখ্যাও অনেক ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৩০০০ ড্যানফোর্থের ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারপর সন্ধ্যা ৭টায় সমাবেশে উপস্থিত সদস্যরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে গান গাইতে গাইতে টরন্টোর ডেন্টোনিয়া পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং ৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার শপথ নেন।
ঢাকাপ্রকাশ: আগামীতে আরও কী কোনো উদ্যোগ আছে?
মনিস রফিক: এই দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বড় আকারে সমাবেশ করা, কানাডার ফেডারেল এবং বিভিন্ন প্রভিন্সের মানবাধিকার পরিষদে এ দাবির সমর্থনের পক্ষে চিঠি দেওয়া, স্থানীয় এমপিপি এবং এমপিদের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রভিন্স এবং ফেডারেলের বৈদেশিক মন্ত্রীদের কাছে তুলে ধরা। এ ছাড়া, অনলাইনে এ ব্যাপারে গণ সমর্থনের প্রক্রিয়া শুরু করা। কানাডার অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে এ দাবির পক্ষে সমাবেশ করা হবে। যদিও সেটার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
আরএ/