গণতন্ত্র ফেরাতে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: রেজা কিবরিয়া
যুক্তরাষ্ট্র সফররত গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকেও ভূমিকা রাখতে হবে। মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাদের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই দেশে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশ প্রগতিশীল জোট (বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্স অব নর্থ আমেরিকা) আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়লসটন হলের ফং মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ ও উপায়' শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আজাদ খানের সঞ্চালনায় 'বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ ও উপায়' শীর্ষক উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্স অব নর্থ আমেরিকা (বিডিপানা)-এর সাধারণ সম্পাদক তানভির নেওয়াজ। তিনি তার বক্তব্যে দেশের বিভিন্নখাতে সরকারের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ সেতুর নির্মাণ খরচের কথা তুলে ধরে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বক্তা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অতীতে কোনো সরকারের আমলেই এত পরিমাণের দুর্নীতি আর হয়নি।
সাম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশ শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের উদাহরণ টেনে ড. কিবরিয়া বলেন শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট দুপুরের খাবার খেতে বাসায় গিয়ে আর অফিসে ফিরে আসতে পারেনি। সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এর পর থেকে মূলত আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশেও এমন ঘটনা আস্বাভাবিক কিছু না।
তিনি আরও বলেন, বিনা পরীক্ষায় বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা যেমন জিপিএ-৫ পাচ্ছেন, ঠিক তেমনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমপি ও মন্ত্রীরা এখন গণতন্ত্র চর্চা করছেন। দেশে এখন আর কোনো গণতন্ত্র নেই। দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে হলে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকেও ভূমিকা রাখাতে হবে। মার্কিন রাজনীতিবিদদের কাছে বারবার গিয়ে দেশের বর্তমান অবস্থার কথা জানানোর জন্য তিনি প্রবাসীদেরকে অনুরোধ করেন।
১৪ বছরেও তারা বাবার হত্যার কোনো বিচার হয়নি আক্ষেপ প্রকাশ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারের এক জনসভা থেকে ফেরার সময় গ্রেনেড হামলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডে কোন দল জড়িত ছিল তা জানতে আমি আগ্রহী নই। আমি সত্যটা জানতে চাই। কারা এই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা ছিল? ঢাকায় বসে কারা জড়িত ছিল এবং এলাকায় যারা জড়িত ছিল এবং গ্রেনেডর উৎস কি-এই প্রশ্নগুলো অনেক আগে তুলেছি। এই দুই প্রশ্নের উত্তর পাইনি। সেদিন তদন্তকারীদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে, এটাও সবাই জানে। কারা প্রভাবিত করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ এটা করেছে। বিএনপি ঠিক মতো কাজ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুটি ইউজলেস লোক ছিল। ফখরুদ্দীন আহমেদ বলে একটা দুষ্ট লোক ছিল যে দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। সে ছিল জেনারেল মঈন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি ইচ্ছাকৃতভাবে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি বিদেশে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বড় বড় পদ-পদবি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছি শুধু দেশের মানুষের সেবা করার উদ্দেশে। আমার মনে হয়েছে, নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজ করার সময় এসেছে।
আরএ/