ডেমোক্রেটিক বিশ্ব গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়: খসরু
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসুর মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকার অসত্য মিথ্যাচার করছে, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দলীয় কাজে ব্যবহার করছে। আমরা আজকে স্পেসিফিক উদাহরণ দিয়ে বলছি, তারা (সরকার) ওয়াশিংটনে কী করছে, ব্রাসেলসে কী করছে, জার্মানিতে কী করছে? বিভিন্ন জায়গাইয় কী করছে?’
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আপনারা অভিযোগ করছেন সরকার দূতাবাসগুলোকে ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে, আপনাদের তো একটি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি আছে, আপনারা সত্য প্রকাশে কী করছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এতক্ষণ আপনারা কি শুনলেন, এটা শুনানোর জন্যই তো আপনাদের ডাকা হয়েছে। সরকার যে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের দিয়ে অপপ্রচার করছে সেটার মুখোশ উন্মোচন করলাম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্র ও জনগনের সুরক্ষা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করতে। অথচ এখন তারা কাজ করছে একটা দলের জন্য। অনেক উদাহরণ আছে, আরও জানতে চাইলে আরও বলবো তবে সব কিছু একদিনে এক জায়গায় বলা যাবে না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে আন্তর্জাতিক মহলের কোনো সহযোগিতা, সমর্থন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কি না, না কি করবেন প্রশ্নের উত্তরে আমির খসরু বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, মার্কিন কংগ্রেসনাল (গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস) তার প্রতিটি বক্তব্যে বলেছেন- আগামী দিনে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেখানে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। আমরা চাইবো সেই নির্বাচনটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হোক। প্রয়োজনে আমি বাংলাদেশে এসে স্বচক্ষে দেখবো, এবং স্টেটহোল্ডার যারা আছে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপ করবো। শুধু তাই নয় আজকে ডেমোক্রেটিক বিশ্ব সকলের দৃষ্টি রয়েছে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে, তারা সকলে চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ও অংশীদারিত্বমূলক একটি নির্বাচন হোক।সকলের পক্ষ থেকে একাধিকবার এটা স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে মিকসের বক্তব্যের মধ্যে এটা উল্লেখ করা আছে যে, তারা দেখতে চান বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকটি বক্তব্যের মধ্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। গত নির্বাচন গুলো যে সঠিক হয়নি সেটি তারা বলেছেন।’
গত ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যকে ‘বিকৃত’ আখ্যা দেওয়া ওয়াশিংটন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘তার (গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস) বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে শুধু সচেতন মানুষের সাথেই প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। কারণ আপনারা সকলে জানেন, ইতিমধ্যে কংগ্রেসম্যান মিকস নিজেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।’
‘মার্কিন হাউজ অব ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি সুস্পষ্টভাবে র্যাব ও তার বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তারদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করব। আগামী নির্বাচন অবাধ ও তার সুষ্ঠু নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানাবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।’
বেলজিয়াম দূতাবাসের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতা্বাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিলো। আপনারা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো দেখতে পাবেন। যেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মতো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ।’
‘বিদেশে বসবানরত বাংলাদেশী একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা যখন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি,নির্বাচনের অনিয়ম, জনগনের ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি জনগনের সামনে অথবা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বই অথবা প্রচারপত্র বা আলোচনার উদ্যোগ নেন তখনই এই সরকার তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শক্তিকে ব্যবহার করে, তার নিজস্ব বাহিনীকে ব্যবহার করে এসব অপকর্মকে ঢাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসসহ বিভিন্ন দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে আবারো এটাই প্রমাণিত হলো।’
এমএইচ/এএস