নিষেধাজ্ঞার ট্রেইলার পিকচার আরো বাকি: হাফিজ উদ্দিন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘২০২২ সাল হবে ঘটনাবহুল বছর। সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যা হচ্ছে সেগুলোর ট্রেইলার পিকচার আরো বাকি, নিষেধাজ্ঞা আরো আসবে, আসছে।’
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
তিনি বলেন, ‘অবশেষে সকল জড়তা ভেঙে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক দফার আন্দোলনে যেতে। কারণ আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চাই জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র আইনের শাসন মানবাধিকার সেজন্য যা কিছু প্রয়োজন সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিভিন্ন স্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব। তাহলে প্রতিষ্ঠিত হবে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা রাস্তায় নামুন বিএনপি আপনাদের পাশে থাকবে। আপনারা রাস্তায় নামলে সরকার পালাবার পথ পাবে না। সেই আন্দোলনে জিন্সের প্যান্ট যেমন থাকবে তেমনি দাঁড়ি টুপি পরিহিত লোকজন থাকবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অনেক কৃতি সন্তান, অনেক নিরীহ মানুষ আজ কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছেন, তাদের মুক্তি চাওয়ার জন্য কেউ নাই, তাদের জন্য তাদের পরিবার যে অর্থকষ্টে ভুগছেন তারা যে কত ভাবে সময় অতিবাহিত করছেন, তাদের দুঃখ কষ্ট সীমাহীন অথচ পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাতে সরকার আলেম-ওলামাদের গণতন্ত্রের শত্রু দেশের শত্রু বলে আখ্যায়িত করেন।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হননি, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সব স্থান থেকে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন কিন্তু সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, বক্তৃতা-বিবৃতি অনেক হয়েছে, এবার অন্য কিছু করতে হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন কয়েকজন ব্যাক্তি যারা নরহত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো তাদেরকে নরহত্যা করতে যারা বলেছেন, অর্ডার দিয়েছেন, আদেশ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তো দিচ্ছে না?। তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আনা উচিত।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে জনগণের পক্ষে মাঠে নেমে ছিলাম। মুক্তিবাহিনী গঠন করেছি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি তখন যাদের দায়িত্ব ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করা তখন তারা পারেননি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্র কেবলমাত্র বিএনপির পক্ষে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। সেজন্য সাধারণ মানুষ ছাত্রসমাজ-যুবকদের কি কোনো দায়িত্ব নেই ? সুতরাং আমরা আশা করব এই বাংলাদেশের তরুণ সমাজের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পরিবর্তনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তারা। তাই আগামী দিনে সবাইকে নিয়ে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। কারণ ওই একটি ভাষণের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়নি, দেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্রের জন্য অথচ বর্তমান অনির্বাচিত সরকার সেই গণতন্ত্রকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। আবার একটা মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে নামতে হবে। এই মুক্তিযুদ্ধের ছাত্র-তরুণরা যদি এগিয়ে আসে ভালো না আসলে আমাদের যাদের বয়স হয়েছে পক্ককেশ আমাদের কি হবে আমরাই মাঠে নামব।’
এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা পূর্বপরিকল্পিত তাদের পছন্দের লোক দ্বারা গঠিত হবে নির্বাচন কমিশন। তিন বছর পূর্বেই শেখ হাসিনা নির্ধারণ করে রেখেছেন, কে বা কাদের দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম আবু তাহেরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
এমএইচ/এসআইএইচ