ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত এক হাজার ৪০১ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। অতি গুরুতর আহত ৪৯৩ জনকে ‘ক’ শ্রেণিতে এবং গুরুতর আহত ৯০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণিতে রেখে এ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
শুক্রবার ( ২৮ ফেব্রুয়ারি) এ গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। আহতদের ধরনভেদে ‘গ’ শ্রেণির তালিকাও প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়। গেজেটে আহতদের মেডিকেল কেস আইডি, নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহিদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এসব তালিকা ধরে গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের আর্থিকভাবে সহায়তা করবে সরকার। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৮৩৪ জনের পরিবারের সদস্যরা ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন। এ টাকার মধ্যে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখা গেজেট দুটি প্রকাশ করেছে। গেজেটে আহতদের মেডিক্যাল কেস আইডি, নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রকাশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া শুধু ‘আহত’দের জন্য ‘গ’ শ্রেণির তালিকাও গেজেট আকারে প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়, যেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আরো ১০ হাজার ৬৪৮ জনের নাম।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। মূলত এসব তালিকা ধরে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা দেবে সরকার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, চলতি (মার্চ) মাস থেকেই ভাতা কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া আহতরা তিন ক্যাটাগরিতে এককালীন অর্থ, মাসিক ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন। আহত জুলাই যোদ্ধারা তিনটি মেডিক্যাল ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা পাবেন।
এগুলো হলো :
‘ক’ শ্রেণি বা অতি গুরুতর আহত, ‘খ’ শ্রেণি বা গুরুতর আহত ও ‘গ’ শ্রেণি বা আহত। তিন ক্যাটাগরিতে থাকা ব্যক্তিদের সবাই পরিচয়পত্র পাবেন।
কোন শ্রেণিতে কারা, যেসব সুবিধা থাকছে
প্রকাশিত গেজেটে ‘ক’ শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, যাঁরা চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপনে অক্ষম তাঁরা এই শ্রেণিতে রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা ও প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা এবং উপযুক্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন তাঁরা। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
অন্যদিকে ‘খ’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন গুরুতর আহত ৯০৮ জন। পর্যাপ্ত চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে যেসব যোদ্ধার জীবনযাপন করতে অন্য ব্যক্তির আংশিক সহায়তা প্রয়োজন তাঁরা এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গুরুতর আহতরা এককালীন তিন লাখ টাকা ও প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি-আধাসরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন তাঁরা।
সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, ‘গ’ শ্রেণিতে আরো ১০ হাজার ৬৪৮ জন ‘আহত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাঁরা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ। তবে ‘গ’ শ্রেণির তালিকাটি এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি। এই শ্রেণিতে আহতরা এককালীন এক লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া পুনর্বাসন সুবিধাও থাকছে।