‘সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে শুধু প্রকল্প করেছে’
সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রকল্প করেছে এবং বহু টাকা বানিয়েছে আর বড় ধরনের দুর্যোগ, বিপর্যয়ের মধ্যে জাতিকে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘দেশে টোটাল ব্ল্যাকআউট এর মতো হয়েছিল গতকাল। এর থেকে যেটা বোঝা যায় সেটা হচ্ছে যে, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে। টাকা-পয়সা বহু বানিয়েছে। জাতিকে তারা একটি বড় ধরনের দুর্যোগ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
বুধবার (৫ অক্টোবর) দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অসুস্থ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি টেকনিক্যাল মানুষ নই, টেকনিক্যাল মানুষ যারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন তারা বলবেন। আমি শুধু এইটুকু বুঝি সরকার যে এত চিৎকার করছে এবং বলছে তার সময়ে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের উন্নয়ন হয়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন বেশি হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে সেমিনার বক্তব্যে এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যে সমস্যাগুলো কোথায় আছে। কিন্তু গতকালের বিষয়টা ছিল সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ব্যাপার যে, হঠাৎ করে সারাদেশে বিদ্যুৎ চলে গেছে। প্রায় ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন ছিল সারাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘ব্ল্যাকআউটের ফলে নেট বন্ধ, সমস্ত কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। পাম্প স্টেশন সেগুলোও বন্ধ হয়েছে, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যার দিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষিতে সেচের ব্যবস্থা করা যায়নি। যার ফলে সর্বক্ষেত্রে একটা অসহনীয় অবস্থা জাতি উপলব্ধি করেছে। এটার জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট গ্রহণ করা, বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলা। শুধু অপরিকল্পিত নয়, একটা লক্ষ্য আছে সেটা হচ্ছে দুর্নীতি করা। সেই দুর্নীতির মাধ্যমেই এই সমস্ত তথাকথিত উন্নয়নের কথাগুলো বলে, কাজগুলো করে মানুষকে সর্বক্ষেত্রে এ দুর্ভোগ হচ্ছে। বিদ্যুতের এই যে বিভ্রাট, রাস্তার যে বিভ্রাট; টঙ্গী থেকে উত্তরা আসতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাগে। সর্বেক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে কোথাও তো কোনো জবাবদিহিতা নাই। সংসদ অনির্বাচিত, তাই আপনি যে কোথাও প্রশ্ন করবেন প্রশ্নের জবাব চাইবেন সেই ব্যবস্থা তো হচ্ছে না। যেহেতু জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো প্রকার দায় নেই, দায়িত্বশীলতার বিষয় নেই, তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনাটা তারই একটা প্রমাণ তাদের (সরকার) দায়িত্বশীলতার অভাব, জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এই ঘটনা। সেই কারণেই আমরা বারবার বলছি এই সরকার এখন দেশের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে।’
মির্জা ফখরুল সরকারকে দ্রুত পদত্যাগ করারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। তাহলেই শুধু মাত্র আমরা এই ভয়াবহ লুটপাট করে যাওয়ার দুষ্টচক্র তৈরিকারী থেকে মুক্ত হব।’
তিনি বলেন, ‘বর্গিরা যেমন এসে লুট করে নিয়ে চলে যেত, ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগ আজকে লুট করছে। সবাই জানেন হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে তারা পাচার করছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা এই সরকারের পদত্যাগ। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।’
দেশের ২৬টি সেক্টর সম্পর্কে সুনিদিষ্টভাবে বলা হয়েছে তথ্য চাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা ভয়াবহ ব্যাপার। আমরা যেখানে বলছি কর্তৃত্ববাদী সরকার তার যে বর্হিপ্রকাশ এবং তারা যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে। প্রেসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে।
দেশের মানুষকে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে সমস্ত তথ্য থেকে এটা তারই বর্হিপ্রকাশ।এখন আর কোনো ফাঁক রইলো না এ কথা বলতে যে স্বয়ং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যদি এই ধরনের নির্দেশনা/প্রজ্ঞাপন আসে তাহলে এই দেশ যে পুরোপুরি কর্তৃত্ববাদী দেশ হয়ে গেছে সে ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই, যোগ করেন তিনি। অবিলম্বেই এই ভয়াবহ সার্কুলার প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
এমএইচ/এমএমএ/