আর কারও সঙ্গে জোট নয়, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়
আগামীতে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে চায় না জাতীয় পার্টি। এককভাবে ক্ষমতায় যেতে সংগ্রামের ডাক দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা বলেছেন ক্ষমতার বাইরে আর কত দিন? আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে কেউ ভালো নেই। যারাই জোট করেছিল তাদের করুন দশা। রাশেদ খান মেনন এর দল দুই ভাগ হয়েছে, হাসানুল হক ইনুর দল দুই ভাগ হয়েছে। দীলিপ বড়ুয়ার দল সেটিও দুই ভাগ। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে জাতীয় পার্টির মঙ্গল হবে না বলেও জানান কেন্দ্রীয় নেতারা।
শনিবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।
আলোচনার সূত্রপাত করে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আমাদের ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমরা সমর্থন দিয়েছিলাম বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।
তার বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাদের ছাড়া মানে কি? বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র প্রতি বীতশ্রদ্ধ। বাংলার মানুষ চায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবে। জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় যাবে। আমরা কারও নেতৃত্বে জোটে যাব না। জিএম কাদের এর নেতৃত্বে যদি কেউ আসে, জোট হতে পারে।
সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, '১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আমরা ১৫১টি আসন পেয়েছিলাম। আমরা তো ৩০০ আসনের মধ্যে ২১০টি আসন পাইনি, ২৫০ টি আসন পাইনি, ২৯০টি আসন পাইনি, কারণ আমরা সেদিন স্বচ্ছ নির্বাচন করেছিলাম। এরশাদের জাতীয় পার্টির ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের সময় সে রকম আন্দোলন ছিল না, তারপরও আমরা ক্ষমতা ছেড়েছি। ক্ষমতা ছেড়েছি একটি কারণে আমরা জনগণকে বিশ্বাস করতাম। সেদিন দাবি উঠেছিল আমরা ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। আমরা মানুষের মতামতকে, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মান দেখিয়ে সেদিন আমরা নির্বাচন দেওয়ার জন্য পদত্যাগ করেছিরাম। পদত্যাগের তো কোন দরকার ছিল না, কিন্তু তারপরও পদত্যাগ করেছিরাম। কারণ, আমরা চেয়েছিলাম এই দেশ আমার চেয়ে, আমার পার্টির চেয়ে বড়।'
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সেদিন বিএনপিকে সমর্থন দেয়নি বলে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে অনেক কথা বলে। আর কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হতে চায় না জাতীয় পার্টি। যতদিন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় না যাবে, তাদের সংগ্রাম চলবে বলেও জানান তিনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বাবলা সাহেব শপথ পড়ালেন জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'আপনারা ক্ষমতা চান? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেশি কিছু লাগে না। শৃঙ্খলা বজায় রেখে নেতাদের প্রতি আস্থা রেখে সংগ্রাম করলেই হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সময় বাক স্বাধীনতা ছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল। এখন গণতন্ত্র নেই। নৌকার ওপর মানুষের শ্রদ্ধাবোধ উঠে গেছে। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। তবে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আছেন মহাসচিব আছেন, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান তিন জন আছেন। আপনারা যা করবেন আমরা একইভাবে আছি। তবে ইমামের পেছনে নামাজ পড়ব কিন্তু সালাম ফিরে যদি দেখি ইমাম নেই তাহলে তো মুশকিল।'
এসএম/এমএমএ/