সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ/ নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কতটা অযোগ্য অদক্ষ হলে ধরণের একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, কনটেইনার ডিপোর জন্য একটা নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে সেটা অনুসরণ করলে এরকম দুর্ঘটনা ঘটতো না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সেগুলো কেউ পর্যবেক্ষণ করছে কি না, সেখানে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা রয়েছে কিনা তা নিয়ে কেউ মনিটরিং করছে কিনা একথা কেউ বলছে না। গতকাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টকশো দেখে আমার যা মনে হয়েছে, ওইখানে যে অপরাধ হয়েছে সেটা কেউ স্বীকার করছেন না। আমি অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন বিশেষজ্ঞদের তারা কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
একই সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনার সম্পূর্ণ দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। সোমবার (৬ জুন) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কন্টেইনার ডিপো দুর্ঘটনায় যখন অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তখন জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল তা না করে উল্টো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল একজন আর্মির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কথা টেলিভিশনে শুনছিলাম- তিনি বলছিলেন যে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আজকে আমি এই জায়গায় প্রশ্ন করতে চাই-এই সরকার তাহলে কী করছে? আমি যে কথাটা বলছি যে, তথাকথিত অবকাঠামো নির্মানের নামে নিজেদের পকেট ভারী করা, দুর্নীতির করা-এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। জনগনের কল্যাণের জন্য, জনগনের সেফটি-সিকিউরিটির জন্য, মানুষকে ভালো রাখার জন্য এই সরকারের কোনো দায়বন্ধতা নেই। এই সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার না সেই কারণে তাদের জবাবদিহিতা নেই।’
সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে দেশের পোষাকশিল্পে অথবা অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অলরেডি এই নিয়ে কথা-বার্তা শুরু হয়েছে। কারণ যেসব ঘটনা ইতিমধ্যে তাজরীন ফ্যাক্টরি বা অন্যান্য ফ্যাক্টরিগুলো এবং রানা প্লাজার ঘটনার ব্যাপারে গার্মেন্টস যেভাবে একটা নেগেটিভ অবস্থায় এসেছিল। এটা পরবর্তীকালে যারা বায়ারস ছিল বা বিদেশিরা বাংলাদেশের সঙ্গে কেনাকাটা করে তাদের সহযোগিতায় আমাদের গার্মেন্টস প্রডিউসার ও মালিকদের আগ্রহের কারণে সেই ব্যাপারটা অনেকটা কাটিয়ে এসেছে। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত সেইভাবে আসেনি। এই ধরনের অগ্নিকান্ডগুলো ঘটছে সেইগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রয়োজনীয় যে লোকবল, প্রয়োজনীয় যেসব উপকরণ সেসব নাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন শোষকের দলে পরিণত হয়েছে। এখন আর শোষিতের পক্ষে কথা বলার তাদের সুযোগ নেই। কারণ তারাই এখন শোষক হয়ে গেছে শোষণ করছে বাংলাদেশকে। এখন তারা লুট করছে, দুর্নীতি করছে, অর্থপাঁচার করছে। মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষ ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন তো আপনার বাংলাদেশের সামনে আর কিচ্ছুই নেই, পদ্মা সেতু ছাড়া আর বলে কিছুই নেই। অথচ এরমধ্যে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল, মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল সম্পূর্ণভাবে তাদের ব্যর্থতার জন্য। আমি পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধানমন্ত্রী একটু সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, পদ্মা ব্রিজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তাতে তো এই সমস্যার (সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ) সমাধান হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল। অন্যান্য যেকোনো সভ্য দেশ হলে তাই করত। আমেরিকাতে যে বাচ্চাগুলো মেরে ফেলল তখনই আমেরিকা জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। আপনি দেখেন, আসলে এই সরকারের সঙ্গে জনগনের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা জনগণের পালস বুঝে না, জনগণ কী চাচ্ছে, কী আশা করছে-সেগুলো নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তারা মনে করে আমরা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছি, বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকব। সেই কারনে দুঃসময়ে মানুষ যখন একটু সান্ত্বনা আশা করে তখন তারা জনগনের ওপর আরেকটা চাপিয়ে দেয়। তাদের একটাই লক্ষ্য এদেশকে লুট করা।’
এমএইচ/এমএমএ/