আমরা স্বাধীনতা পেলেও মুক্তি পাইনি : জি এম কাদের
আমরা স্বাধীনতা, ভূখন্ড আর পতাকা পেলেও মুক্তি পাইনি উল্লেখ করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, যে মুক্তির জন্য দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে, ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছে, লাখ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম দিয়েছে সেই মুক্তি আমরা আজো পাইনি। তাই মুক্তির সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। আবারো মুক্তির সংগ্রাম শুরু করতে হবে, এবারের মুক্তির সংগ্রাম হয়তো আরো কঠিন হবে। মুক্তি সংগ্রামে হয়তো আরো বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, আরো বেশি রক্ত দিতে হবে। মুক্তির আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় এ কথা বলেন দলটির চেয়ারম্যান।
জি এম কাদের বলেন, আগামীকাল বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে জাতীয় পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যাবেন। রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপের পরে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলবেন তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই আমরা শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে বৈষম্য শুরু করে। আমাদের সম্পদ লুট করতে শুরু করে তারা। বাঙালিদের তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে। এর প্রতিবাদেই আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। আমরা স্বাধীনতা পেলেও এখনো মুক্তি পাইনি। ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি না করলে যোগ্যতা থাকলেও চাকরি মেলে না, ব্যবসা করতে পারে না। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী গেলো ৬ বছরে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এর বাইরে আরো কত শত কোটি টাকা পাচার হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রার্থীদের মাঠে দাঁড়াতে দিতে চাচ্ছে না, পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে চাপ দিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হতে সরকার সমর্থকরা সব ধরনের অনিয়ম করছে।
তিনি বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। খাবার ও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নেই। রাস্তায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, যেন দেখার কেউ নেই।
জি এম কাদের বলেন, গণপরিবহন কারা পরিচালনা করে তা কেউ জানে না। গণপরিবহন পরিচালনায় সরকারের কোনো হাত নেই তা বোঝাই যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, যারা গণপরিবহন পরিচালনা করেন তারাই সরকার পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, সরকারি দল আনন্দ-ফুর্তি করতে মাঝে মাঝে রাস্তা দখল করে। এ সময় লাখো মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়, অসুস্থ্য রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারে না। পরে সরকারি দলের পক্ষ থেকে একটি দুঃখ প্রকাশ করা হয় যেন তাদের ফুর্তি করাটাই সবচেয়ে জরুরি।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সাথে আমাদের সমর্থন নেই। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে আমাদের কোন দ্বিমত নেই।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে আমরা এক তরফা প্রেম করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই আগামীতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাবে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে কোন দল কি আচরণ করেছিল আমরা তা ভুলিনি।
তিনি আরও বলেন, যারা পল্লীবন্ধুকে স্বৈরাচার বলেন তারা নিজেদের চেহারা একটু আয়নায় দেখে নিন। দেশ ও মানুষের সুখ এবং সম্বৃদ্ধির জন্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএম আব্দুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শেরীফা কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মহিলা পার্টির সদস্য সচিব হেনা খান পন্নি, জাতীয় স্বেসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, জাতীয় যুব সংহতির সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, জাতীয় ছাত্র সমাজ-এর সহ সভাপতি শাহ ইমরান রিপন।
পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরীফা কাদের এমপির নির্দেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ করে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি।
এসএম/এসআইএইচ