আগেও ৪ বার নিষিদ্ধ হয়েছিল জামায়াত, তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে না দলটি
আগেও ৪ বার নিষিদ্ধ হয়েছিল জামায়াত, তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে না দলটি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর হাতে গড়া একটি রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের হাইকোর্ট। ৩ বিচারপতির গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এ রায় হয়। ওই রায়ের ফলে জামায়াত দলগতভাবে ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার অধিকার হারায়।
প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান আমলেই ৫ বছরের মধ্যে দুইবার নিষিদ্ধ হয় দলটি। প্রথমবার ১৯৫৯ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৬৪ সালে। সেসময় দলের প্রধান মওদুদীসহ গ্রেফতার করা হয় ৬০ জামায়াত নেতাকে। এদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের যে ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন, তাদের অন্যতম গোলাম আযম।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। কিন্তু ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করায় আবারও বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিভিন্ন মাত্রায় দণ্ডিত হয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এমন একটি মামলার রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল।
৪৫ বছর পর আবারও রাজনীতি থেকে বিতাড়িত হলো জামায়াতে ইসলামী। সাম্প্রতিককালে হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং উস্কানির অভিযোগ আনা হয় দলটির বিরুদ্ধে। ফলে, নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
নির্বাহী আদেশে গতকাল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ আদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে না দলটি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জামায়াত নেতারা মনে করেন, নিষিদ্ধ ঘোষণা তাদের জন্য একটি ফাঁদ। তারা যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় বা রাজপথে কর্মসূচি পালন করে তাহলে সরকার চলমান ছাত্রদের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিবে।
সূত্রটির দাবি, কোটা বিরোধী আন্দোলনে সংঘাত-সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী নিহত হননি। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া, সারা দেশে কিছু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কোটা আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে গত ৩১শে জুলাই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম আলো। এতে তখন পর্যন্ত ডিএমপি’র গ্রেপ্তারের হিসাব দিয়ে বলা হয়, ২৪৩ মামলায় ২৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ২২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিএনপি’র নেতাকর্মী ২৬৯ জন, জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জামায়াত বরাবরই সমালোচিত। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। এই বিচারের রায়ে জামায়াতের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতের গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বেশির ভাগ কার্যালয়ই বন্ধ অনেক বছর ধরে। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এতদিন জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেয়া হয়নি। কার্যত অনেকটা নিষিদ্ধই ছিল দলটি। সূত্র: সারাবাংলা, মানবজমিন