বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করায় বিপাকে পড়েছেন ইউরোপের কয়েকটি দেশে চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশন নেই- এমন সব দেশের ক্ষেত্রেই এই ঝামেলা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দিল্লির বিকল্প হিসেবে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ভিসাপ্রাপ্তি বা দিল্লি থেকে ঢাকায় ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে ইউরোপের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা ও দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের কাছে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তিনি তাদের বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসা নিতে পারছে না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাচ্ছে না বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের। ভিসা অফিস ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই উপকৃত হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বুলগেরিয়ার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূতদের জানান, দেশটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দিল্লির বিকল্প হিসেবে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ভিসাপ্রাপ্তি বা দিল্লি থেকে ঢাকায় ভিসা সেন্টার স্থানান্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেষ্টার পরও ইউরোপের দেশগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে রোমানিয়ার ভিসার জন্য এখন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে অবস্থিত দেশটির দূতাবাসে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও কাজাখস্তানে বুলগেরিয়ার ভিসার আবেদন করতে পারবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। ব্যাংকক থেকে ভিসা দেওয়ার কথা জানিয়েছে কাজাখস্তান। এই তিনটি ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই তিন দেশের বাইরে আর কোনো দেশ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মিলছে না। অন্যদিকে দিল্লিতে ইইউভুক্ত যেসব দেশের দূতাবাস রয়েছে, তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছেন সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনার ও কর্মকর্তারা। তাতেও উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি ইইউ রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে। এ ছাড়া ভিয়েনা থেকেও বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লির বিকল্প একটি উপায় বের করা যায়। সে ক্ষেত্রেও কোনো দেশের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি বা পাওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। কারণ, বাংলাদেশে নতুন করে কোনো দেশের ভিসা অফিস খোলা ব্যয়সাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। কাজেই কোনো দেশের স্বার্থ বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যাপ্ত অর্থবহ না হলে নতুন বা বিকল্প ভিসা অফিস খুলতে আগ্রহী হবে না কোনো দেশ। এরপরও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি।
এদিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সব দেশের ভিসা ঢাকা থেকেই হয়ে থাকে। আর বেশির ভাগ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর ভিসা দিল্লি থেকে নিতে হয়। তবে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা এখনো বন্ধ রয়েছে। সীমিতভাবে দেওয়া হচ্ছে জরুরি মেডিকেল ও শিক্ষার্থীদের জন্য তৃতীয় দেশের ভিসা। তবে অনেক শিক্ষার্থীই ভারতের ভিসা না পেয়ে ইউরোপে তাদের গন্তব্যের দেশে যেতে পারছেন না।