সংস্কারপন্থী নেতাদের সাথে বিএনপির ত্যাগী নেতাদের বিভেদ
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতারা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও ছিল সীমিত। তবে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেখা গেছে, সেই সংস্কারপন্থী নেতারাই এখন মিছিলের সামনের সারিতে। বিপরীতে, যারা গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়ে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, সেই ত্যাগী নেতারাই আজ পিছনের সারিতে।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির ভেতরে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। সে সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টায় মেতে ওঠে একদল নেতা। তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি দল সংস্কারের দাবিতে একজোট হয়। তাদের সমর্থনে কিছু সাবেক সংসদ সদস্যও যোগ দেন এবং প্রকাশ্যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।
সে সময় মূল পরিকল্পনা ছিল বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা। দীর্ঘ এই সময়ের ব্যবধানে সংস্কারপন্থী নেতাদের অনেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন তারা পুনরায় সক্রিয় হয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ভূমিকা রাখতে চাইছেন, যা দলের ভেতরে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এইসব সংস্কারপন্থীদের ছিল না কোনো খোঁজ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের দুঃসময়ে সংস্কারপন্থীদের অনেককে ডেকেও নমিনেশন দেওয়া যায়নি। রাজনীতি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন অনেক সংস্কারপন্থী নেতা।
এদিকে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্দোলন সংগ্রাম জেলখাটা ত্যাগী নেতাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সংস্কারপন্থী নেতাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ত্যাগী এক নেতা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর খ্যাত এইসব সংস্কারপন্থী নেতাদের নেতৃত্বেই ৫ আগস্টের পরে দেশের যত বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি দখলদারি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের পুনর্বাসন ও দলে ভেড়ানোর অভিযোগ আছে। এর অন্যতম কারণ হলো দল থেকে বিচ্ছিন্ন এইসব সংস্কারপন্থী নেতা তাদের নিজেদের দল ভারী করতে আওয়ামী লীগকে কাছে নিয়েছেন।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কোনো নেতা বা কর্মী যদি চাঁদাবাজি দখলদারির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় সাথে সাথেই সেইসব নেতা কর্মীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
সংস্কারপন্থী কয়েকজন সাবেক এমপি নিজ এলাকায় প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যে, সকালে তারেক জিয়ার সাথে ১০ মিনিট কথা হয়েছে, বিকালে ৮ মিনিট কথা হয়েছে, মনোনয়ন নিশ্চিত। এ ঘটনার সত্যতা জানতে বিএনপির দপ্তরের একজনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান- আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্যার বিএনপির সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে গুলশান অফিস ও পার্টি অফিসের স্কাইপে কথা বলেন। নির্ধারিত ব্যক্তি এগুলো মনিটর করেন। আমার জানামতে মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও খুব বেশি জরুরি ছাড়া কল দেন না।
এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবার আর ভুল করবে না। সংস্কারপন্থীদের কারণে দলের ভিতর কোনো বিভেদ হোক দল সেটা চায় না। দীর্ঘদিন যারা দলকে সার্ভিস দিয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করবে বিএনপি। মনোনয়ন দিবে ওইসব ত্যাগীদের। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সুস্থ ধারার রাজনীতি করবে বিএনপি।