দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে দুবাইয়ের বিখ্যাত বুর্জ খলিফায় তাদের একটি ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানির বিনিয়োগও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হোসেন আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এটি মঞ্জুর করেন।
আবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যরা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ হস্তান্তর ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে সেই অর্থের একটি অংশ অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এসব অর্থ যুক্তরাজ্য, স্লোভাকিয়া ও দুবাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে স্লোভাকিয়ান কোম্পানি ক্যালকাট্রুনিক হোল্ডিং (৫,০০০ ইউরো), জিএজিএজিইউজিইউ (৫,০০০ ইউরো), যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ল্ডেরা কর্পোরেশন লিমিটেড (১,০০০ শেয়ার) এবং এএসডব্লিউএ হোল্ডিংস লিমিটেড (৫,০০০ শেয়ার)।
এছাড়া, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহানের নামে যুক্তরাজ্যের ইউরোএশিয়া টেলিভিশন নেটওয়ার্ক লিমিটেড-এ থাকা ৫,০০০ শেয়ার এবং আনভীরের ভাই সাফওয়ান সোবহানের গ্লোবাল মাল্টি ট্রেড লিমিটেড-এর বিনিয়োগও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
দুবাইয়ের বিখ্যাত বুর্জ খলিফার ১১তম ফ্লোরে অবস্থিত আনভীরের মালিকানাধীন একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, ছেলে সাদাত সোবহানের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান, ছেলে সাফিয়াত সোবহান, সাফওয়ান সোবহান এবং তার স্ত্রী ইয়াশা সোবহানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসব অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত।
তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করেছেন এবং তা বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া, তাদের আয়কর রিটার্নেও এসব বিনিয়োগের তথ্য গোপন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ বড় ব্যবসায়ীদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচটি বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং তাদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে।
অক্টোবরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আহমেদ আকবর সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়। একই মাসে দুদকের আবেদনে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এছাড়া, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল ও অর্থপাচারের অভিযোগে আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
দুদকসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তদন্ত এখনও চলছে। আদালতের এই আদেশের ফলে বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত হলো। ভবিষ্যতে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা সময়ই বলে দেবে।