বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন। সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে তিনি দ্রুততম সময়ে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যে (লন্ডন) যাবেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি বিশ্রাম নেবেন। এরপর তিনি লিভারের জটিল চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে যাবেন। লন্ডনের আগে বা পরে তিনি ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবও যেতে পারেন। এজন্য তিনি সৌদি ভিসাও নিয়েছেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস এবং চোখের সমস্যাসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন। এসব কারণে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
লন্ডনে প্রাথমিক চিকিৎসার পর, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রে তার লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা সেন্টারে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি আশা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার এ উদ্যোগে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এটি নাশকতা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এদিকে ওই রাতেই আরেকটি আগুনের ঘটনা ঘটে। সেটি রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার সচিব নিবাসে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই রাতে আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাজধানীর ইস্কাটনের সচিব নিবাসে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন জানান, রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে অবস্থিত সচিব নিবাসের ২০ তলা ভবনের ৪ তলার একটি বাসার রান্নাঘরে আগুন লাগে।
সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত হয়নি।প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় নাশকতার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। একই রাতে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় এ বিষয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উভয় ঘটনাস্থলে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
দুদক জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোড হতে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তারও আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ওই দুইটি অভিযোগই একই অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বা ৫৯ হাজার কোটি টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেখানে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ পরিবারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে রূপপুর ছাড়াও আশ্রয়ণসহ ৮টি প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এরপর ১৮ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়।
প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাক চাপায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী মো. সোহানুর জামান নয়নের গ্রামের বাড়ি রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
আক্তারুজ্জামান ও নার্গিস দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। কৃষক বাবার সব ভরসা ছিল তাকে ঘিরেই। অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলের চাকরি দিয়ে অনাগত দিনগুলো সুখে শান্তিতে কাটাবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিলো সব।
সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তার মা নার্গিস বেগম। একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে শোকের মাতম বইছে পরিবারে।
ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন ছিলেন একজন দক্ষ কর্মী। দক্ষ কর্মীর সুবাদে তাকে সম্প্রতি সিলেট থেকে নিয়ে এসে রাজধানীর তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। কর্ম দক্ষতার কারণে দুই বছরে স্থান করে নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস স্পেশাল টিমে।
সর্বশেষ বুধবার দিবাগত রাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় নিহত হন নয়ন। নয়নের এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার থেকে শুরু করে সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ৫ মিনিটের দিকে ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর প্রাঙ্গণে।
এসময় পুরো প্রাঙ্গণে ছিল শোকের ছায়া৷ দেশের পতাকায় মোড়ানো ফায়ার ফাইটার নয়নের মরদেহ যখন সেখানে রাখা হয় তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সবার চোখ তখন অশ্রুসিক্ত।
জানাজার আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ফায়ার সার্ভিসে সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে ফায়ার ফাইটার নয়নকে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে জানাজায় অংশ নিতে আসা নয়নের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই এভাবে চলে গেল যে আর ফিরে আসবে না কখনো। তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আমার কিন্তু আর শেষ দেখা হলো না। তার এই অকাল মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। যুদ্ধ করতে গিয়েছিল কিন্তু যুদ্ধ শুরুর আগেই সে নির্মমভাবে দুর্ঘটনায় নিহত হলো। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন কাজ করছিল তখন যদি পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিত তাহলে আমার ভাইকে এভাবে আর মরতে হতো না। আমরা আশা করব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে, যাতে করে নয়নের মত আর কারো মৃত্যু না হয়।
জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গতকাল আমাদের ফায়ার ফাইটার নয়ন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। আমরা সবাই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। নয়নের বয়স খুবই কম ছিল। সে মাত্র দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করছিল। কর্তব্যরত অবস্থায় সে মারা যায়, তার মা বাবার যে কী অবস্থা সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। সে তার বাবা-মার একমাত্র ছেলে। কিছুদিন আগে সিলেটে থেকে পোস্টিং হয়ে ঢাকায় এসেছে। সে খুবই দক্ষ ফায়ার ফাইটার ছিল তাই তাকে স্পেশাল টিমের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল।