জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (৩০ মে)। বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি দিন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভাসহ ১৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি, অঙ্গসংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন।
প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুশিক্ত নয়নে স্মরণ করবেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআন খানি, দোয়া ও মোনাজাত, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা, কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চলে যান করাচি শহরে। সেখানেই লেখাপড়া করেন জিয়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাবুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি ওই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও একটি বিশেষ উপহার লাভ করেন। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৯ মে) এক বার্তায় মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি জাতীয় সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তার অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক, নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির ১৮ দিনের কর্মসূচি:
দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে।
দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার (৩০ মে) ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ দিন সকাল ১১টায় মহাসচিবের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও রুহের মাগফেরাত কামনায় কবর জিয়ারত করবেন। পরে ওলামা দলের উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন। ৩০ মে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রতি থানায় দুঃস্থদের মাঝে কাপড় ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।
এ দিন দেশের সকল জেলা ও মহানগরসহ সকল ইউনিটে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনাসভা, দোয়া মাহফিল ও দুঃস্থদের মাঝে কাপড় ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।
এ ছাড়াও আগামী ১ জুন জাসাস, ২ জুন জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি), ৪ জুন শ্রমিক দল, ৮ জুন তাঁতী দল, ১০ জুন মৎস্যজীবী দল আলোচনাসভা করবে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বিএনপির অন্যান্য সংগঠন সমূহ ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করবে।
আরএ/