‘নাইকো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সরকারের অশুভ পরিকল্পনা’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এটি সরকারের একটি অশুভ পরিকল্পনা। এই মামলাতেও আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়ে আওয়ামী প্রধান এই মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বেগম জিয়ার বিচারকার্য চালানো হচ্ছে।
বুধবার (২৪ মে) নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন রুহুল কবির।
তিনি বলেন, নাইকো মামলায় বেগম জিয়ার বিচারকার্য শুরু সম্পূর্ণরুপে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উগ্রতা ও প্রতিহিংসা। শেখ হাসিনা তার বিরোধীদের জীবন, সম্পদ, সম্পত্তি, নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে বিপন্ন করে যাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, গণআন্দোলনে ভীত-সন্ত্রস্ত আওয়ামী লীগ খেই হারিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির উপর নারকীয় উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৈঠক করে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও মিছিল-সমাবেশের উপর হামলা চালাচ্ছে, গুলি চালাচ্ছে। চারিদিকে তীব্র নিনাদে বিদায় ঘণ্টায় তারা মরণ কামড় দিতে শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ভোট ডাকাত সরকারের হিংস্রতা প্রকট হচ্ছে। গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার নির্যাতনের চন্ডনীতিতে নেমেছে নিশিরাতের সরকার। সারাদেশের জনপদের পর জনপদ আওয়ামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রসজ্জিত করা হয়েছে এবং উজ্জীবিত করা হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করতে।
ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিএনপিকে ঠান্ডা মাথায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। দুইদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে শান্তি সমাবেশ নয়, সারাদেশে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
ওবায়দুল কাদেরসহ তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এই হুংকারের পর বিএনপির ওপর হামলা-মামলা-আটকের অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ র্যাব সোয়াত বাহিনী। সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বিনা উসকানিতে হামলা করেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিশেষ বাহিনী। বৃষ্টির মতো টিয়ারগ্যাস রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে আহত করেছে। গ্রেপ্তার করেছে রাজপথের সাহসী কণ্ঠস্বর সরকারের আতঙ্ক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলমসহ ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। অতীতের মতো আবারো বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর পুরানো নাটক শুরু করেছে।
পতনোন্মুখ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা রাজপথে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই ঘৃণ্য হামলা চালাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আবারো ভাঁওতাবাজির নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মাফিয়া সরকার পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করে দেশে নৈরাজ্য ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সরকার যদি বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে হামলা ও বাধা প্রদানের এ ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এর জন্য সৃষ্ট যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতির দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার হুংকারের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ তার লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেওয়ার চরিত্র বদলায়নি। তারা যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিহ্ন করেছে সেটি ফিরিয়ে দিতে এখনো অনিচ্ছুক। কারণ তাদের মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে মহাদুর্নীতি ও টাকা পাচার। জনগণের টাকায় তারা ফুর্তিবাজি করছে। এই কারণেই তারা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিজভী বলেন, জনগণ এই ফ্যাসিবাদী নিশিরাতের সরকার উৎখাতে রাস্তায় নেমে পড়েছে। হাটে মাঠে ঘাটে মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপির তৃণমূলের শক্তি এখন সবচেয়ে জোরালো। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন এদেশের মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত। তাই একে উপড়ে ফেলা এত সহজ নয় ৷ রক্তপিপাসু মনোভাব পরিত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ চিরতরে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
তিনি বলেন, এই মাফিয়া সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় না। সম্মেলনস্থলের চেয়ার খালি থাকে। তাদের গণভিত্তি ধসে গেছে। তাই পেশীশক্তি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ওরা টিকে থাকতে চায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ভাইদের বলবো অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। এই সরকারই শেষ সরকার নয়। জনগণের সরকার অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হবে। মাফিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হবে খুবই শোচনীয়। অতি বাড়াবাড়ি যারা করবে তাদের উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এমএইচ/আরএ/