ঢাকাসহ সারাদেশ এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত: রিজভী
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার জন্য আওয়ামী অবৈধ সরকার নানা প্রকার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ভয়াবহ বেকারত্ব, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা চরম হ্রাস পাওয়াসহ সারাদেশ ডুবে আছে অনাচার ও নৈরাজ্যের অমানিশায়।
সোমবার (২২ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, জনগণের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সব অধিকার কেড়ে নিয়ে শেখ হাসিনা যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছেন সেটি ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেজন্যই বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে নিপীড়ন-নির্যাতনের নিষ্ঠুর বিভীষিকা। এরা বিগত ১৪ বছর ধরে জাতির ওপর যে ঘোর দুর্দিন বিস্তার ঘটিয়েছে সেটির একমাত্র উদ্দেশ্য যেনতেন প্রকারে অবৈধ সিংহাসন আঁকড়ে রাখা।
রিজভী বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার মানুষ। বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত চলমান কর্মসূচিকে বানচাল করতে সরকার গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা, অন্ধ ও পঙ্গু করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে নিজ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু পুলিশ মজনুকে আটকের কথা এখনো পর্যন্ত স্বীকার কিংবা তার কোনো হদিস দিচ্ছে না। অথচ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সবার সামনে থেকে মজনুকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে ডিবি কার্যালয়েই রাখা হয়েছে, কিন্তু তারা এখনো স্বীকার করছে না। এই ঘটনায় মজনুর পরিবার ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা শঙ্কিত। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর-৪৫২৩/২০২১ এর আদেশ এখনো বলবৎ রয়েছে। উক্ত আদেশে কোনো উপযুক্ত আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ব্যতিরেকে রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাও রয়েছে যেন সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া পেন্ডিং মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো না হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
রুহুল কবির বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশ গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে হানা দিচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশকেই এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন ধরে খুলনা, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, ফেনীসহ বেশকিছু জেলায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও ঢাকা, যশোর, সিলেট, ঝিনাইদহ ও রাজশাহীতেও একইভাবে চলছে রক্তাক্ত আক্রমণ, নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্বিচারে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও আসবাবপত্র ভাংচুর এবং মিথ্যা মামলার হিড়িক চলছে।
রিজভী বলেন, দেশে-বিদেশে সকল জায়গায় এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যে আওয়াজ শুরু হয়েছে তাতে তারা উপলব্ধি করছে যে, তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে, ক্ষমতা তাদের হারাতে হবে। এখন সরকার তাদের সুবিধাভোগী প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নিধনে লেলিয়ে দিয়েছে। এদের ফ্যাসিজমের মাত্রা এতটাই তীব্রতর হয়েছে যে, সরকারবিরোধী যেকোনো কর্মসূচিতেই প্রধানমন্ত্রী তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন। তাই বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হচ্ছে, গুলি করা হচ্ছে এবং নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের নাজেহাল ও হয়রানি করছে। এরই নিষ্ঠুর শিকার হলেন রফিকুল আলম মজনু। বিএনপির উপর এই অত্যাচার নামিয়ে আনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে-আবারও একতরফা ভোট করার প্রস্তুতি।
তিনি বলেন, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন, নির্বাচন বিশ্লেষক, বিদ্ব্যৎজনের অভিমত হচ্ছে-শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। গতকালও ‘সুজন’ এর নেতৃবৃন্দ বলেছেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক নেতারা পছন্দ করে না, যেমন শেখ হাসিনাও করছেন না। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য রক্ত ঝরানো। এই কারণে সামনের নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মনে বিষন্ণ ছায়া ফেলছে। তবে এবার যুগান্তকারী সাহস ও সহনশীলতা দিয়ে জনগণ শেখ হাসিনাকে নির্বাচন নিয়ে তামাশা করতে দেবে না। তিনি রাষ্ট্রসমাজের মধ্যে যতই হিংসার চোরা স্রোতে বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, তার অত্যাচার, গালিগালাজ আর হুমকিকে মোকাবিলা করে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমি অবিলম্বে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে রফিকুল আলম মজনুর হদিস দিয়ে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া এবং ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপির গ্রেপ্তার নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এসএন