নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপির কোনো প্রত্যাশা নেই: ফখরুল
নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে বিএনপির কোনো প্রত্যাশা নেই বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিকালে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
শপথ নেওয়ার আগে মো. সাহাবুদ্দিন একাধিকবার গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার অবস্থান থেকে যতটা ভূমিকা পালন করার সেটা করবেন বলেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যতটা ভুমিকা পালন তো আমরা জানি। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার ওনার (মো. সাহাবুদ্দিন) সুযোগ নাই। আর ওনার সেই সাহস আছে বলে আমরা মনে করছি না।’
তার মানে আপনারা তার ওপর আস্থাশীল না-এমন প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাতো বটেই। এটা তো পরিষ্কার বলেছি আমরা।'
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশাটা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা তো আমরা আগেই বলেছি যে, আমরা কিছুটা হতাশ হয়েছি-যে আমরা যাকে চিনি না, যাকে জাতি জানে না–এ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতেও পারব না। এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে তাকে নিয়ে আসা-এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার না। সেজন্য সেই প্রত্যাশাটাও আমাদের কাছে অস্পষ্ট এবং একটা আবছা হয়ে যাচ্ছে।'
‘নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে কোনো কমেন্ট নেই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবারকার রাষ্ট্রপতি নিয়োগটা কিছুটা আপনার জনগনের কাছে একটা হঠাত করে অপ্রত্যাশিত ভাবে এসেছে। আমি বর্তমানে যে রাষ্ট্রপতি শপথ নিয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে তার সম্পর্কে আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না।’
'এটা, এই নামটা (মো. সাহাবুদ্দিন) জনগনের কাছে একেবারে আসেনি, পরিচিতও ছিলো না। ফলে এখানে একটা সংকট (চলমান সংকট) কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে একটা সন্দিহান, একটা প্রশ্ন আছে মানুষের কাছে উনি কী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। পত্র-পত্রিকার তার যে ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি এটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বা দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্ন রাখিনি। কারণ, আমাদের এখানে রাষ্ট্রপতি নিয়ে আগ্রহটা কম। আমরা মূল জায়গাটায় যেতে চেয়েছি। আজকে নির্বাচন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক নয়, নির্বাচনে আমরা বিরোধী যদি অংশগ্রহন করতে না পারি, একটা নিরপেক্ষ সরকার যদি না হয় তাহলে সব কিছু অর্থহীন হয়ে যাবে। সেই কারণে তার ওপর জোর দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত পাবলিক অভিমত যতটুকু দেখেছি তাতে করে জনগণ যে একটা আশস্ত হবে, একটা আশা করবে, প্রত্যাশা করবে সেই ধরনের কোনো কিছু আমরা দেখিনি পত্র-পত্রিকায়। আজকে শপথ নেওয়ার পরে তিনি কী বলবেন সেটাও আমরা জানি না। কিন্তু ঘটনাগুলো যা ঘটেছে, যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন তাতে করে পরিষ্কার হয়ে গেছে জনগণের কাছে যে প্রক্রিয়ায় তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছেন তাতে করে একমাত্র সরকার প্রধানেরই তিনি (মো. সাহাবুদ্দিন) বেশি আস্থাভাজন।'
'কারণ যে পার্লামেন্টারি বোর্ড সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাকে (প্রধানমন্ত্রী) দিয়েছিল। পত্র-পত্রিকায় যা দেখেছি যে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র লিডার যারা আছেন তারা কেউ এই নিয়োগ বিষয়ে কিছু জানতেন না। এটা সম্পূর্ণ এককভাবে তিনিই (প্রধানমন্ত্রী) এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পারত। সেটা তিনি (শেখ হাসিনা) করেননি। এখান থেকে বুঝা যায় যে, তার ও সরকারের ইচ্ছা একটাই যেভাবে হোক সমস্ত রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা আবারও আগামী নির্বাচন পার হতে চায়, আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দখলে রাখতে চায়। এটা আমাদের রিডিং, আমার ব্যক্তিগত রিডিং।'
‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নেই’
রাজনৈতিক সংকট সমাধানে যদি রাষ্ট্রপতি সংলাপের উদ্যোগে নিলে আপনারা যাবেন কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'যদি'র তো কোনো উত্তর থাকে না। বিষয়টা হচ্ছে যে, সেই ধরনের কোনো সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে কি না। সরকারের বাইরে রাষ্ট্রপতির কিছু করার তো কোনো ক্ষমতাই নেই।'
'যদি সরকার চায় তাহলে না রাষ্ট্রপতি চাইবেন। সরকার তো পরিষ্কার বলেই দিচ্ছে যে, এই নিয়ে (নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার) কোনো আলোচনা করব না, আলাপই করব না। এখন আলোচনার কোনো প্রশ্নই হতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'সরকারকে বুঝতে হবে, রাজি হতে হবে যে, বাংলাদেশকে যদি সেভ করতে হয়। গণতন্ত্রকে যদি সত্যি ফিরিয়ে আনতে হয়, মানুষের ভবিষ্যত যদি নির্মাণ করতে হয় এবং একটা সংঘাতহীন। কনফ্রোট্রেশন পলিটিক্সকে বাদ দিয়ে পিসফুল পলিটিক্স শুরু করতে হয়, তাহলে একটাই মাত্র পথ-সেটা হচ্ছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টাকে নিষ্পন্ন করতে হবে। এর বাইরে কিছু নেই।'
মো. সাহাবুদ্দিন কী দলীয় না বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে উঠবেন এ রকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুলের অভিমত জানতে চাইলে বলেন, 'এমনিতে তো যারা রাষ্ট্রপতি হন তারা দল থেকে নির্বাচিত হন। দলীয় আনুগত্যতা থাকতেই পারে। যেমন আপনার আবদুল হামিদ সাহেব ছিলেন দল (আওয়ামী লীগ) থেকে নির্বাচিত, দলীয় লোক ছিলেন। যেমন আমাদের সময়ে বি চৌধুরী (একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী) সাহেব তাই হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, দলীয় হয়ে উঠবেন কি না। এটা কিন্তু নির্ভর করবে যে, তিনি কীভাবে চিন্তা করছেন, তিনি রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধান করবেন নাকি দলের সমস্যা সমাধান করবেন এটা তার (রাষ্ট্রপতি) বিষয়।'
আপনারা নতুন রাষ্ট্রপতি থেকে এ রকম আশা করেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমরা সেটা আশা করি না। কারণ দলকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আওয়ামী লীগকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু তার (মো. সাহাবুদ্দিন) থেকে আশা করার প্রশ্ন উঠতে পারে না। আমরা কোনোটাই আশা করি না। একমাত্র আওয়ামী লীগ যদি সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই আমরা মনে করি যে, শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, সংঘাত এড়িয়ে তত্ত্বাবধায় সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন। সরকারকে এগ্রি করতে হবে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। এটা বিএনপির ব্যাপারে নয়, গোটা দেশের যে ক্রাইসিস তার সমাধান করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নাই, একটা নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নাই।'
তিনি বলেন, 'এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) আমাদের কাছে প্রমাণিত, এটা নতুন না তো। এটা আওয়ামী লীগেরই প্রেসক্রিপশন, আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওই সময়ে দেশের সংকট সমাধান হয়েছে, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, চারটা নির্বাচন হয়েছে, জনগণ গ্রহণ করেছে।'
'এখন আওয়ামী লীগ সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে ভিন্ন প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে এসেছে যাতে তাদের ক্ষমতায় থাকাটা নিরঙ্কুশ করবে, নিশ্চিত করবে।'
বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করার বিষয়টি তুলে ধরেন দলের মহাসচিব।
'একজন ব্যক্তির সঙ্গে সর্বময় ক্ষমতা এবং ট্রেন্ডটা বলে দেয় সে ডিক্টেটর হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি বলে আমরা আমাদের ভিশন-২০৩০ রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ২৭ দফায় সেটা আমরা স্পষ্ট করে বলেছি। এটা আমরা আনার চেষ্টা করব।'
‘আন্দোলন এখন বেগবান হবে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনারা দেখেছেন যে, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, আমাদের এই আন্দোলনে অলরেডি ১৭ জন প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমাদের শত শত মানুষ এখনো কারাগারে আছে। দি মুভমেন্ট ইজ অন।'
'মাঝখানে রোজা-রমজানের মধ্যেও কিন্তু আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করেছি। আপনারা দেখেছেন যে, এই কয়েকদিন আগে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করেছি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এখন মুভেমেন্ট আরও বেগবান হবে। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে মুভমেন্টের ধরন কী হবে, জনগণই সেটা সিদ্ধান্ত নেবে।'
সোমবার সকালে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে মো. শাহাবুদ্দিনকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোপচারিতায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া দেন। নতুন রাষ্ট্রপতি ছাড়া বিএনপি মহাসচিব দেশের চলমান সংকট, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এ সময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এএস