‘প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনেও সত্যের অপলাপ করেছেন’
অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনেও যা বলেছেন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনেও যা বলেছেন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মিডনাইট নির্বাচনের অনৈতিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ায় মানুষ এখন গ্রামে গ্রামে আনন্দ ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। শুধু গ্রাম নয়, গ্রাম-শহরের মানুষের মনে যে ঈদের আনন্দ নাই।’
সোমবার (২৩ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার হলে বা জনসম্পৃক্ত সরকার থাকলে তারা উপলব্ধি করত। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসণের ও জনবিচ্ছিন্ন সরকারের পক্ষে তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। শতভাগ বিদ্যুতায়নের মিথ্যা দাবী করা সরকারের মিথ্যা উন্নয়ন কেমন তা গ্রাম-শহরের মানুষ হারে হারে টের পাচ্ছে। তীব্র দাবদাহ প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের অভাবে বার বার লোডশেডিং এ গ্রাম-শহরের মানুষের জীবন যখন নাকাল, তখন ঈদের দিনে প্রধানমন্ত্রীর এহেন মিথ্যা দাবি জনগণের সাথে নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই না। ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুৎ নাই। ঘরে ঘরে অন্ধকার নেমে এসেছে।’
প্রিন্স বলেন, ‘রমজান মাসে এবং ঈদের আগ মুহূর্তেও ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, রিজভী আহমেদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। কারাগারে তাকে সু-চিকিৎসা দেওয়া হয় নাই। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বার বার তাকে বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার আহ্বান করা হলেও, সরকার তা করে নাই। বার বার তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও ফ্যাসিবাদী সরকার মুক্তি দেয় নাই। সকল মামলায় জামিন থাকলেও অন্যায়ভাবে ঠুনকো কারণে তাকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়া হয় নাই। এটা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি মরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে রিজভী আহমেদ এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
এমরান সালেহ বলেন, ‘ঈদের একদিন আগে অর্থাৎ ২০ এপ্রিল রাতে তারাবি নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিনকে পুলিশ বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল নামাজের পর বাড্ডা থেকে সাদা পোষাকধারীরা জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে তুলে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও এ ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছি। আমরা অবিলম্বে জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে জনসম্মুখে হাজির করারও দাবী জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেও সরকার মিথ্যা মামলা বন্ধ করে নাই। গত ২০ এপ্রিল ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার সহ ও তার ভাই যুবায়ের হোসেন তালুকদারসহ তারাকান্দা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১১ নেতা-কর্মীর নামে ও ১০/১২ জন অজ্ঞাত উল্লেখ করে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়। আমরা অবিলম্বে মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রাম ও শহরে বিদ্যুৎ সংকট এতটাই তীব্র ও প্রকট যে, প্রচণ্ড গরমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০/১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মানুষ দিনাতিপাত করছে। বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাবে কল, কারখানায় এবং কৃষিতে পড়েছে। প্রচণ্ড খরতাপের ফসলের জমি ফেটে চৌচিড় হয়ে যাচ্ছে, বিদ্যুৎতের অভাবে মানুষ জমিতে পানি দিতে পারছে না, ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। রমজান মাস এমনিক ঈদেও মানুষ পরিবার,পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
রোজার আগে সরকার বলেছিল, রোজার মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না। বাস্তবতা হচ্ছে, রোজার মধ্যেও প্রতিদিন প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, এমনকি ঈদের আগের দিনও বেড়েছে। কাপড়ের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের মধ্যে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরাও পরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যগত ঈদ উপহার দিতে পারেনি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হওয়া সরকার মিথ্যা অযুহাতে সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববাজারে সারের দাম যখন ৬২ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে, সরকার তখন তাদের অব্যবস্থাপনা, অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত, দুর্নীতি, লুটপাট আড়াল করতে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির মিথ্যা কথা বলে বাংলাদেশেও সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকারের সিরিজ মিথ্যাচারে এ এক নতুন সংযোজন।’
বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এবার ব্যবসায়ী, কর্মচারীদের ঈদ উৎসব বলে কিছু ছিল না। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বার বার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের পর্যাপ্ত সহযোগিতার দাবি করেছিলাম, কিন্তু সরকার তা করেনি।
গ্রাম গঞ্জে মানুষের আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠার প্রধানমন্ত্রীর দাবি যে, কতটা অবাস্তব, তা সহজেই অনুমেয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনাসহ দুঃশাসনে মানুষের মনে কোনো আনন্দ-উৎসব নেই, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি করে যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, তারা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, লুটপাট করে বিদেশে অর্থপাচার করে দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। বর্তমানে দুর্নীতিবাজরাই ক্ষমতায় আছে এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্দোলনে ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণ তাদের পরাস্ত করবে এবং দুর্নীতি-লুটপাটের বিচার করবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণ এই সরকারকে বিশ্বাস করে না, এই সরকারের প্রতি কোন আস্থাও নাই। তাই গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটাধিকার হরণকারী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নতুন, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহনযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন গণ-দাবিতে পরিনত হয়েছে।
যত তাড়াতাড়ি ক্ষমতাসীনরা এই দাবি মেনে নিবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল, জনগণেরও মঙ্গল হবে। অন্যথায় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণ-বিচ্ছিন্ন ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
এমএইচ/এমএমএ/