জামিন পেলেও ঈদের দিন রিজভী কেন জেলে
১৩৭ দিন কারাগারে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। ঈদের আগেই সব মামলায় তিনি জামিন হলেও গোপালগঞ্জের একটি মানহানির মামলায় তার জামিনের আদেশ কারাগারে যথা সময়ে না পৌঁছানোর কারণে তিনি আটকে গেছেন। যদিও বিএনপির অভিযোগ, রিজভীর সব মামলায় জামিন হয়েছে। আর জামিনের কাগজ ডাকে যেতে দেরি হওয়ায় ই-মেইলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ বলছে ডাকযোগে জামিনের আদেশ আসতে হবে। ঈদের বন্ধের মধ্যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সরকার রিজভী আহমেদকে কারাগারে আটক রেখেছে বলে তাদের দাবি।
শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদের দিন রিজভী আহমেদের সার্বিক বিষয়ে দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের ও তার পরিবারের কাছে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির দাবি, রিজভীর জামিনের কাগজ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল যোগে পাঠানো হলেও তাকে কারা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে আটকে রেখেছে। অবশ্য, এসব বিষয় নিয়ে কারাগারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি জামিনের আদেশ ই-মেইল নয়, ডাকযোগে না এলে আমরা তাকে ছাড়তে পারি না।
ঈদের আগেই রিজভী আহমেদ সব মামলায় জামিনে রয়েছে এমনটা জানিয়ে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চলতি দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেছেন, আপনারা জানেন রিজভী আহমেদ অনেক অসুস্থ। জেলে তিনি ভালো নেই। সব মামলায় জামিন হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ঈদের আগে তার মুক্তি হচ্ছে না। সরকারের ইচ্ছা বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাকে আটকে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। দুর্ভাগ্যজনিত সব মামলায় জামিন থাকার পরেও তার জামিন মিলছে না।
প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, সরকার বলছে দেশে ডিজিটাল হয়েছে কিন্তু জামিনের অর্ডার মেইলে গোপালগঞ্জ থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠালেও কারা কর্তৃপক্ষ বলছে মেইলে নয় এটি সরাসরি ডাকে আসতে হবে। এজন্য ঈদে বন্ধ থাকায় জামিনের অর্ডার কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ডিজিটাল যুগে ই-মেইলকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিহিংসার প্রতিফলনের কারণে রিজভী আহমেদ ঈদের মধ্যে কারাগারে রয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তবে, তিনি কারাগারে মোটেও ভালো নেই। অবিলম্বে তার জামিনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির জন্য জোর দাবি করছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রিজভী আহমেদের রিজভী আহমেদের সহধর্মিণী আরজুমান আরা বেগম বলেন, রিজভী আহমেদ সব মামলায় জামিন থাকলেও সরকারের বিভিন্ন কৌশলের কারণে ইচ্ছা করে ঈদের আগে তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। কারা কতৃপক্ষ বলছে- জামিনের কাগজ ই-মেইলে দিলে হবে না। ডাক যোগে পাঠাতে হবে ঈদের মধ্যে সব বন্ধু তাহলে ডাক যোগে কীভাবে যাবে? যদিও সরকার বলছে- সব কিছু ডিজিটাল হয়েছে কিন্তু এটা আবার কিসের ডিজিটাল?
তিনি বলেন, এমনতিই রিজভী আহমেদ একজন বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি। রিজভী আহমেদের অসুস্থতার বিষয়ে আমরা কারাগারের চিকিৎসককে কয়েকবার ফোন করলে তারা ফোন ধরেন না, ফোন বন্ধ করে রাখেন। কারাগারে তিনি ভালো নেই। অবিলম্বে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া জোরদাবি করছি।
এ বিষয়ে যুবদলের যোগাযোগ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, রিজভী ভাই ঈদের আগে সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও সরকারের জটিলতায় তিনি আজ ঈদের দিনও কারাগারে রয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।
রিজভী আহমেদের সার্বিক সাবেক বিষয় জানতে চাইলে খালেদা জিয়া প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, আজ রিজভীর বিষয়ে তার স্ত্রীর কাছে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার স্ত্রী মহাসচিবকে জামিনের বিষয়টিও জানালেন।
রিজভীর অসুস্থতার বিষয়ে জানতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার ঘোষকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারাগারের দায়িত্বশীল আরেক কর্মকতা (না প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রিজভী আহমেদের জামিনের কাগজ কারাগারে আসেনি। কারা কর্তৃপক্ষ জামিনের আদেশের কপি পেলে অবশ্যই তাকে ছেড়ে দেবেন। তা ছাড়া ডাক যোগ যদি তার জামিনের কাগজ আসে তাহলে ঈদের ছুটির মধ্যেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, কোনো আসামির জামিন হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আর আটকে রাখতে পারে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে এরআগে তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার সিএমএম আদালত কয়েকবার হাজিরা দেওয়ার জন্য আনা হয়। কারাগারে আনা নেওয়ার পথে বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন কারাবন্দি বিএনপির এই নেতা।
এর আগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চালানো ক্রেকডাউনের সময় পুলিশ চার শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে রিজভী আহমেদকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কেএম/এসএন