বিদেশিদের আমন্ত্রণেই আমরা গিয়েছি: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার যারা অবৈধভাবে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করে আছে। যেহেতু তারা নির্বাচিত নয়; তাই জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এই কারণে তারা যা খুশি তাই করে এবং করে যাচ্ছে…। আমরা বারবার বলছি, তারা (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। জনগণ তাদের কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছে। তা না হলে একটা দায়িত্বশীল সরকার এবং একটা সরকার প্রধান কখনোই (অগ্নিকাণ্ড ইস্যুতে) এ ধরনের উক্তি করতে পারেন না। যে ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ লোক দিয়ে তদন্ত করতে হয়। কিন্তু তার আগেই যদি সরকার প্রধান বলে দেন এরা (বিএনপি) দায়ী। তাহলে যারা তদন্ত করবেন তাদের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, তারা সঠিক তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করবেন।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কাযালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ড শুরুর আগে ব্রিজ কাটতে চেয়েছে, পরে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা। প্রশ্ন হচ্ছে ওরা কারা? যদি দেশি লোক হয়ে থাকেন তাহলে কি এখানে তারা জেনে শুনেই গিয়ে ছিলেন যে একটা দুর্ঘটনা হবে। এই বিষয়গুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছেই না। যারা দায়িত্বশীল তারা কিছু বলার আগেই তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী বললেন বিএনপির প্রতি ঈঙ্গিত করে। অথচ অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা ও জন্মদাতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ; আমরা নই। আমরা সন্ত্রাস করি না। সন্ত্রাস ওদের জিনের মধ্যে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতি এটা তাদের বডি কেমিস্ট্রি। এখান থেকে এরা বের হতে পারে না। যখন ক্ষমতা পায় তখন সর্বগ্রাসী দুর্নীতি করা, লুট করা হয়। বর্গিদের মতো এরা যেমন এসে লুট করে নিয়ে যায় তেমনি আওয়ামী লীগও যখন ক্ষমতায় আসে তখন লুট করে নিয়ে যায়। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরা হচ্ছে সর্বগ্রাসী দুর্নীতিপরায়ণ, লুটেরা ডাকাত। এজন্য তারা কখনো জনগণের গ্রহণযোগ্যতা পায় না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে আমরা দেখা করতে চাই না, বিদেশিরা আমাদের আমন্ত্রণ করেছেন আমরা গিয়েছি। প্রত্যোক বার তাদের আমন্ত্রণে গিয়েছি। ধর্না কে দিচ্ছে? কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা (আওয়ামী লীগ)। সব জায়গা গিয়ে বলছে আগামী নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণে। আমাদের স্পষ্ট কথা; তাদের এই ধরনের কথা মূল্যহীন, অবান্তর। একটাই কথা জনগণ তাদের দেখতে চায় না। এখনো সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করা। সংসদ বিলুপ্ত করা। তারপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূত (যুক্তরাষ্ট্র) উনি নিজেই অবগত যে এই দেশে আইনের শাসন মানবাধিকার নেই, গণতন্ত্রহীন অবস্থা বিরাজমান। যা তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে আমাদের নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
সভায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় চার্জ গঠন ও বিচার শুরু করায় আদালতের নির্দেশে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে বিরোধী দলকে নির্মূল করার নীল নকশার অংশ হিসেবে ১/১১ অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রুরা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক পরিবার শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান জোবায়দা রহমান এবং এই জিয়া পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রহসনমূলক বিচার ও ফরমায়েসি রায় দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া, জনাব তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করে আসছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করার লক্ষ্য হচ্ছে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানকে রাজনীতির বাইরে রাখা। প্রকৃত পক্ষে অবৈধ সরকার বাংলাদেশকে গণতন্ত্রহীন একটি এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। জিয়া পরিবাররই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের প্রায় ৪০ লক্ষ নেতা-কর্মী ও সমর্থনকারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, কারাগারে নির্যাতন, হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করছে। লক্ষ্য, দেশে কর্তৃত্ববাদী এক নায়েকতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদকে চিরস্থায়ী করা। সভা মনে করে, তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত জনগণ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে, বঙ্গ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রীদের বিএনপিকে দোষারোপ করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়, সভা মনে করে অবাধ, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারন উদঘটন না করে বিরোধী দলের প্রতি আঙ্গুল তোলা ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর কৌশল। অগ্নিকাণ্ডগুলোর প্রতিটাই এই অবৈধ সরকারের ব্যর্থতার কারণে সংঘঠিত হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর ও সংগঠনগুলোর তদারকির অভাব, সীমাহীন উদাসীনতা এবং দুর্নীতির কারণেই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে জনগণকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপকৌশল মাত্র।
এসএন