‘শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায় ফরমায়েসী’
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের ৭ বছর করে কারাদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করা হলো তা নিঃসন্দেহে ফরমায়েসী রায়। এর আগেও ২০২১ সালে তৈরি করা আইনে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেওয়াসহ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি। আইন আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুসঙ্গ করে ফেলেছে।
এমরান সালেহ বলেন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি ঘটনার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপস্থিত থাকেন তবে তার পক্ষে কীভাবে সেদিনই ঢাকায় এসে ল্যান্ডফোনে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলা সম্ভব? এই ঘটনায় কেউ হতাহত ছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে একজনকে আহত সাজিয়ে মামলা করা হলে সেও সাক্ষী দিতে যায়নি। এমনকি যেসব সাংবাদিকদের সাক্ষী করা হয়েছিল, মূলধারার সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও এই সাজানো মামলায় সাক্ষী দেননি। ঘটনার এক যুগ পর পাকা রাস্তার উপর থেকে একটি বুলেটের খোসা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলাটিকে পরিচালনা করা হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের নিকট প্রশ্ন রাখতে চাই-তর্কের খাতিরে যদি বলি, সে সময় যদি সেখানে গুলি করার ঘটনা ঘটেও থাকে তাহলে এক যুগ পর রাস্তায় বুলেটের খোসা পাওয়া কি হাস্যকর কিংবা অসম্ভব নয়? প্রকৃতপক্ষে সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী নিরাপত্তা রক্ষীরাই দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল। এ ছাড়া সেখানে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের ৭ বছর করে কারাদণ্ড প্রদানের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার দণ্ডবিধি অংশে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতা-কর্মীকে ৪ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবির। আসামিদের মধ্যে দুইজন (মাহফুজুর রহমান সাবু এবং জাবিদ হাসান লাকী) দণ্ড ভোগ করা অবস্থায় কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি বরাবরই জনগণের শক্তিকে অবলম্বন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। অতীতের মতো বর্তমান অবৈধ সরকার নানাভাবে নিজেরাই নাশকতার সৃষ্টি করে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো পরিকল্পনা করে তা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর এর দায় চাপানোর অংশ হিসেবে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের জড়ানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজ যে দণ্ড ঘোষণা করা হলো তা সম্পূর্ণরূপে ফরমায়েসী।
তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজকে আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রূপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল। দেশব্যাপী অত্যাচার, নিপীড়ন, লুণ্ঠন, দখল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এগুলোকে আড়াল করতেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাদের জড়িয়ে আদালতকে ব্যবহার করে নির্দয় রায় দেওয়া হচ্ছে, আজকের রায়ও সেই নিষ্ঠুরতার অংশ। সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, আজকের রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ। আমরা আজকের এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী রায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পুরোপুরি প্রত্যাখান করছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছে।
এমএইচ/এসজি