বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর অবস্থান কর্মসূচি কাল
ফাইল ফটো
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে এবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। শনিবার (১ এপ্রিল) ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশনের সামনে বেলা ২টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতারা এবং অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও একই দিনে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন, গণ-গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি এবং বিদ্যুৎ গ্যাস ও জ্বালানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা বাস্তবায়নে এই অবস্থান কর্মসূচি পালিত করবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে শনিবার দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংক সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করবে, পল্টন মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করবে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আর শনিবার বিকাল ৩টার দিকে কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মসূচি পালন করবে এলডিপি। মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম মতিঝিল নটরডেম কলেজের বিপরীত দিকে গণফোরাম চত্বরে বিকাল ৪ থেকে ৫ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে এবং গণ অধিকার পরিষদ এর অবস্থান কর্মসূচি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকাল তিনটায়।
বিএনপির দপ্তর সূত্র মতে, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭টি মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সভায় সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মসহ দাবিগুলো তুলে ধরা হবে। এ ছাড়াও দলের ৮২ সাংগঠনিক জেলা, ৬ শতাধিক থানা-উপজেলায় অবস্থান, মানববন্ধন ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিমও করা হয়েছে। এছাড়া ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে মতবিনিময় ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরেরও ৫০ সাংগঠনিক থানায় পৃথকভাবে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ৮২ সাংগঠনিক জেলার কর্মসূচিতেও (১ এপ্রিল সব মহানগর ও জেলায় দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান) কেন্দ্রীয় নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। ৮ এপ্রিল সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। থানা-উপজেলার কর্মসূচি সফলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হচ্ছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, রমজান জুড়ে এসব কর্মসূচি দেওয়ার মূল কারণ নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখা। সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মসহ দশ দফা সংবলিত একটি ‘বুকলেট’ তৈরি করা হচ্ছে। যা সারাদেশে গণসংযোগকালে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিতরণ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা যাতে কর্মসূচি পালন করে একসঙ্গে ইফতার করতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ কর্মসূচি পালন ও ইফতার এক সঙ্গেই আয়োজন করবে দলটির তৃণমূল। আর বিএনপির একদফা আন্দোলন কৌশল দেখে তা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
এদিকে আন্দোলতের গতি ধরে রাখতে ও দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে বেছে নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। ১ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল সারাদেশে অবস্থান, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে তারা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করছেন তৃণমূল পর্যায়ে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে জনগণ পুরোপুরি তৈরি। এপ্রিলের শেষের দিকে ঈদ হলে আমাদের হাতে সময় আছে মে-জুন। জুনের শেষে আবারও ইদ। তাই আমরা আশা করি, জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে বিএনপি সঠিক নেতৃত্ব দেবে।
অতীতে রোজার মাসে ইফতার পার্টি ছাড়া কখনোই মাঠের কোনো আন্দোলনে যায়নি বিএনপি। এবারই প্রথম রোজার মধ্যেও কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। আর রমজানে বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার বিএনপি জন্য এতই মরিয়া হয়ে ওঠেছে যে তারা রোজার মাসও দেখে না, সাধারণ মাসও দেখে না। তাদের কার্যকলাপ সবকিছুই অসংলগ্ন। তাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন হতে দেবে না।
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ইফতার আয়োজনও দলের একটি নতুন কৌশল। বিকালে সভা হবে, সভা শেষে ইফতারের আয়োজন থাকবে। অর্থাৎ ব্যানারে মতবিনিময় সভা ও ইফতার পার্টি লেখা থাকবে। এতে করে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তুলনামূলক হয়রানি কম হবে।
এমএইচ/এএস