নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে- বর্তমানের মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে অর্থহীন।
তিনি বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয় এবং ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময়ে সম্ভব নয় সে কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না। চিঠি পাঠানোর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বুধবার (২৯ মার্চ) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে পাঠানো চিঠিটির বিষয়ে আলোচনা হয়। চিঠিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে দাবি করে সভা মনে করে অবৈধ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতাদের ‘জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে এবং এত মানুষ লাইন দিয়ে ইফতারসামগ্রী কিনছেন প্রমাণ করে যে, তাদের আয় বেড়েছে’- উক্তি জনগণের সঙ্গে নিকৃষ্ট ধরনের মশকরা ছাড়া আর কিছু নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর বার বার সরকারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করলেও সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। সরকারি দলের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও একশ্রেণির কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সভায় আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গৃহীত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব শাখাকে অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিকদের দেশে বসবাসকারী নিকট আত্মীয়দের উপর হামলা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলায় গভীর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ‘আলজাজিরায়’ বাংলাদেশে মোবাইল-টেলিফোনে আড়িপাতার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ক্রয়ের বিষয়ে সরকারের যোগসাজশ সর্ম্পকিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশকারী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের খান সামির ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে গত ১৭ মার্চ সাদা পোশাকধারী লোকেরা মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করার বিষয়ে গভীর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপপ্রবাসী কয়েকজন সাংবাদিকদের দেশে বসবাসরত পরিবারের উপর আক্রমণ, হুমকির নিন্দা জানানো হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোনকে গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা অবিলম্বে সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানায়।
সভায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের ই-মেইল সার্ভার হ্যাকারদের কবলে পড়ার সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ইতিপূর্বে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাইবার আক্রমণের কবলে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা এবং কোনো প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে। ডিজিটাল সিকিউটিরি মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে সাইবার নিরাপত্তার নামে সরকার নিপীড়নমূলক আইন তৈরিতেই ব্যস্ত। একই সঙ্গে এই আইনের অপ্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্ন মত পোষণকারী সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিক ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী কারার হীন চক্রান্ত করছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে চূড়ান্তভাবে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও সভার আলোচনায় উঠে এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ২২ মার্চ সরকারের ভূমি দপ্তরের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে র্যাব কর্তৃক বেআইনিভাবে তুলে নেওয়া এবং নির্যাতনের ফলে তার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন মহিলাকে কোনো সুনিদির্ষ্ট মামলা ব্যতিরেকে তুলে নেওয়া এবং ফলশ্রুতিতে মৃত্যু আবারও প্রমাণ করেছে এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে বিষয়টি আমলে নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সব তথ্য উপস্থাপন করতে নির্দেশ দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এ কথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে, সুলতানা জেসমিন র্যাব কাস্টডিতে মারা গেছে যা চরমভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সভায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবি জানানো হয় এবং সুলতানা জেসমিনকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
এমএইচ/এসজি