আজকের বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মার: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মার। এই বাংলাদেশ কারও কাম্য ছিল না। এখনো শোষণ-নিপীড়ন অব্যাহত আছে। আমরা এই বাংলাদেশ চাইনি।
সোমবার (২৭ মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশের আয়োজন করেছে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।
দেশে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নওগাঁয় র্যাব এক নারীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার বলছে, নিহত ওই নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার, সেই র্যাবের বিরুদ্ধে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে। নিষেধাজ্ঞার পর নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে গিয়েছিল। এখন তা আবার ঘটতে শুরু করছে। কারণ যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৭১ সালের পাকহানাদার সরকারের সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো পার্থক্য কেউ নেই দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে সরকার অধিষ্ঠিত তা একাত্তরের পাকবাহিনীর প্রেতাত্মা। এরা সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না, ৭২ সালেই এদের আসল মুখোশ খুলে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ মনে করে তারা একাই যুদ্ধ করেছে এ কারণে তারা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীদের নাম স্মরণ করে না। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম তো উচ্চারণই করতে চায় না বরং তাকে আরও দোষ দেয়।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে দেশে অর্থনীতির রোল মডেল হয়েছে, অর্থনীতি নয় অনর্থনীতি চলছে, এর মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে। কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের কাজ প্রতারণা করা। ২০০৮ সালে ১০ টাকা চালের কথা বলেছে, এখন চালের দাম কত? তারা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কথা বলছে, যুদ্ধ নয় বরং আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় তাদের দুর্নীতিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তারা বলে, এত উন্নতি চোখে দেখে না অথচ সাধারণ মানুষের পেটের উন্নতি হয়নি। ঘর দিয়েছে দুই-তিনদিন পরপর ঘর ভেঙে পড়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হচ্ছে। পদ্মা সেতু করেছেন ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এখন এক বছর না যেতেই আবার রাস্তা বন্ধ করে পদ্মা সেতুর রিপেয়ারিং শুরু হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এরা দুর্নীতি করছে। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত ধ্বংস করেছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে সংলাপের নাটক করা হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিইনি। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছাড়া আমরা সংলাপ করব না।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের সরকার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, লেবুর হালি ১০০ টাকা। বেগুন ৮০ টাকা। লুটপাট করে স্বাধীনতার অর্জনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ফিরে পেতে আমাদের আবার নতুন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশটা এখন লুটেরাদের হাতে পড়ে গেছে। মানুষকে উজ্জীবিত করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারকে সরানো হবে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলে এক দিনেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। যতদিন মানুষের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন যুদ্ধ চলবে।
ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জনগণ বিরোধী, একে সরাতে হবে। ভবিষ্যতে আর কোনো রাতের নির্বাচনকে মেনে নেওয়া হবে না। এখন নির্বাচন কমিশনও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পান না। ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবে।
এমএইচ/এসজি