‘বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের একটি অংশ আ.লীগের পক্ষে কাজ করছে’
আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতা রাখার জন্য বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের একটি অংশ কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তেল, গ্যাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন এর উপর হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
খসরু বলেন, আজকের সবকিছু উপেক্ষা করে একটি দখলদার সরকার বসে রয়েছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগ হচ্ছে তাদের রাখার জন্য। তাদের রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধার কোমরে রশি বাঁধা হয়েছে। তাদের রাখার জন্য আজকে বিরোধীদলের ১৭ জন নেতাকে খুন করা হয়েছে। তাদের রাখার জন্য ৩৭ লাখ বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ভিন্নমত যারাই করছে তারা আজকে রাষ্ট্রীয় শত্রু হিসেবে পরিণত হয়েছে।
নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে রাষ্ট্রপতি হয়েছে তা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা ব্যথা নেই। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, প্রশ্ন উঠেছে, এটার বৈধতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে লেখালেখি হচ্ছে; বুদ্ধিজীবীরা, আইনজীবীরা, পেশাজীবীরা রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়ে যে কথাবার্তা বলছে, এগুলো নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না, কারণ এ নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা ব্যথা নেই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখানে একটি অবৈধ দখলদার সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। দেশ দখল করে বসে আছে, এই দখলদাররা কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, কাউকে মন্ত্রী বানিয়েছে, কাউকে এমপি বানিয়েছে। এদের আইনের তো কোনো বালাই নেই। এখানে আইনের কোনো প্রশ্ন আসে না। যারা এদের বানাচ্ছে তারাই তো দখলদার, অবৈধ। সরকার অবৈধ, যে নির্বাচন কমিশনারের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে তারাও অবৈধ। পুরো বিষয়টা হচ্ছে যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। সুতরাং কাকে রাষ্ট্রপতি বানালো, কাকে প্রধানমন্ত্রী বানাল, কাকে মন্ত্রী বানাল, কাকে এমপি বানাল, এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথার কারণ নেই। এটা নিয়ে আলোচনা করার কোনো দরকার নেই।
খসরু বলেন, অবৈধ সরকারের পতনের জন্য আমরা আন্দোলন করব। আজকের লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ রাস্তায় নেমেছে। সবার একটাই কথা— সেটা হচ্ছে এই অবৈধ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তি পাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, গণতন্ত্রের চেতনায় সাম্য, অর্থনৈতিক চেতনা, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সাংবিধানিক স্বাধীনতা এটা ফিরে পাবার একমাত্রই পথ হচ্ছে অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করা। আজকে দেশ জেগেছে বিশ্ব আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
তিনি বলেন, এখন একজন মার্কিন কূটনীতিক ঢাকায়। তিনি যখন সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন— দেশে গণতন্ত্র নিম্নগামী থাকবে, নিচের দিকে চলে যাবে, তাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও নিম্নগামী হবে, সহযোগিতা কমে আসবে।
গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সফররত মার্কিন কুটনীতিক ডেরেক শোলে বলেন, বিশ্বের শক্তিশালী গণতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। বিশ্বের যেকোনো দেশে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা সীমিত করে নেয়। এর মানে এই নয় যে আমরা সহযোগিতা করব না। এর মানে এটাও নয় যে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়। সম্পর্ক সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনায় আসে ব্যবসা–বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আমির খসরু বলেন, এগুলো সবচেয়ে কঠিন কথা। মানবাধিকার প্রশ্নে কোনো আপোষ নাই বলেছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যতিত কোনো গণতন্ত্র চলতে পারে না। এই কথাগুলো ঢাকায় বসে তিনি বলেছেন। কত অপমানকর!
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের পকেটে চলে গেছে। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ যেমন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে, তেমনি বিশ্ববাসী, বিশ্ববিবেক প্রতিবাদ করছে। এই প্রতিবাদ বাংলাদেশে যেমন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বিশ্ববাসীও জোর করে ক্ষমতায় যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির ব্যাপারী প্রমুখ।
এমএইচ/আরএ/