শেখ হাসিনার নির্দেশে নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশকে বানচাল করতেই সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যতই নীল নকশা করা হোক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে নয়াপল্টনের গণসমাবেশকে সাফল্যমণ্ডিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আজ মাগরিবের পরপরই নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুস্কৃতিকারিরা। এটি আওয়ামী সরকারের নির্দেশিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ প্রযোজনা। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশের একটা মাস্টারপ্ল্যান।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন-নয়াপল্টনে যারা জমায়েত করবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। সুতরাং এই গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট তৈরি করার জন্য এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন সন্ত্রাসের সূত্রপাত করা হয়েছে।
রুহুল কবির বলেন, আওয়ামী সরকার টিকে থাকার জন্য মরণকামড় দিতে চাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মানুষের মনের কথা উপলব্ধি করতে পারছে না। জনগণ এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, রক্ষা পাবে বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, পুলিশের আইজি বলেছেন বিএনপিকে যেখানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। অর্থাৎ পুলিশ প্রধান আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই কথাবার্তা বলছেন। তিনি কোনও ন্যায়-নীতি পরোয়া করছেন না। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী দুঃশাসনের সেবক হিসেবে তিনি কাজ করছেন। সেজন্য নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পরিকল্পিত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গণগ্রেপ্তারের অভিযান চালানো হচ্ছে।
রিজভী বলেন, দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষতা হারিয়ে বিরোধী দল দমনের এক ভয়ঙ্কর নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাস আর মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করেছে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কারণেই দেশব্যাপী জনমানুষে এক শুন্যতাবোধ তৈরি হয়েছে। এরা গুম-খুনের কর্মসূচিকে নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে মানুষের স্বাধীন কণ্ঠকে স্তব্ধ করে যাচ্ছে। এদের দ্বারাই শেখ হাসিনা দেশের উপর দখলদারী বজায় রেখেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিকে পণ্ড করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে দমন নীতি প্রয়োগ করে যাচ্ছে তাতে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রবঞ্চনা ও কপটতার আশ্রয় নিয়ে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে তার দায় বিএনপির উপর চাপানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা যায় না। প্রতিনিয়ত আগুন সন্ত্রাসের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা যে সরকারি গোয়েন্দা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল সেটি ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নিজেই একটা মহা বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের সকল গৌরবোজ্জল অর্জনকে ম্লান করে শেখ হাসিনা দেশকে অন্তর্হীন শুন্যতার পথে চালিত করছে। অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা আর ছলনার আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার স্বপ্ন নিয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজিয়েছেন। ক’দিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন-তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আপনি তো জনগণকেই ক্ষমতাচ্যুত করেছেন তাদের নাগরিক অধিকার ও ভোট কেড়ে নিয়ে। বাকশালের মারণরোগের পুনর্মূদ্রণ করে আপনি জনগণকেই লোহার শিকলে বন্দি করে রেখেছেন। আর এ জন্য ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশকে নিয়ে নানামুখী চক্রান্তে মেতে উঠেছেন।