‘বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারে বেপরোয়া আওয়ামী সরকার’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যাদের একমাত্র সাধনা অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখা। ক্ষমতা লাভের আগে বা পরে কোনো সময় তারা ন্যায়-নীতি গ্রাহ্য করেনি। এ কারণেই গণতন্ত্রের নাম শুনলেই তারা চমকে উঠে। যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতায় এসেই আটঘাট বেঁধে গণতন্ত্র, গণঅধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লাগে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপির জনসমাবেশে জনতার বিপুল পরিমাণ সমাগম দেখে আওয়ামী সরকার তেলেসমাতি শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তারে করতে কাণ্ডজ্ঞানহীন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার।
রুহুল কবির বলেন, আগুন সন্ত্রাসের মতো অপরাধ করে উল্টো বিএনপির উপর দায় চাপানোর এক নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন চালু করেছে আওয়ামী লীগ। ওরা আগুন ছড়ানোর গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। পুরোনো হাতিয়ার শান দিয়ে নতুন করে সেটির ব্যবহার করছে। এরা আগুন সন্ত্রাসের মডেল পুনরায় ব্যবহার করছে। যার নমুনা দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে। এক্ষেত্রে পুলিশ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে অবৈধ সরকার বিচার-বিবেচনাবোধহীন চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপির সবদিক বিবেচনা করে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত দিলেও পুলিশ শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জোর জবরদস্তি করছে। এটি একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ। আওয়ামী লীগ যখন যেখানে মনে করে সেখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পায়। সেখানে শত শত বাসে মানুষ আনা হয়। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল যায় সেখানে। ঢাকাজুড়েই মাইকের হর্ন বসানো হয়। নগরবাসীর চলাচল স্থবির হয়ে যায়। অথচ পুলিশ টু শব্দ করে না, বরং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করে যায়। অথচ বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গেলে অসংখ্য শর্তের বৃত্তে তা আটকানোর চেষ্টা করা হয়। মিথ্যা ও দাসত্বের বাড়াবাড়ি দিয়ে কখনোই বিজয় অর্জিত হয় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা এখন হুমকি দিচ্ছেন- ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে হেফাজতের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ কথা শুনে এখন মানুষ আবারও বিস্ময়ে প্রশ্ন করছে- আপনারা সেদিন হেফাজতকে দমন করতে কত লোককে হত্যা করেছেন? এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসের যত আলামত দেখা যাচ্ছে তা আপনারা এবং আপনাদের পৃষ্ঠপোষক সরকারি গোয়েন্দারা করছে। যেটি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। আবারও আপনারা বিএনপিকে দমনের নামে সেই হিংসার পথে নেমেছেন। আন্দোলন দমানোর নামে আরও কত যে মৃত্যু, ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটাবে সেই নিয়ে জনমনে বিরাট সংশয় দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও মহাদুর্নীতিতে সেখানে শূন্য গহ্বর তৈরি হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনরা লুটে নিয়ে গেছে। দেশে আজ লুটেরাদেরই জয়জয়কার। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটেরাদের বিচার না হওয়ার কারণে দেশ আজ গভীর খাদের কিনারে। প্রতি সেক্টরে দুর্নীতির সমান্তরাল উল্লম্ফন। জাতি অর্থনৈতিক সংকটে বিপন্ন। সবাই জানে এই দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রটেক্টর আওয়ামী সরকার। তাই তারা নির্বিকার, নিশ্চুপ। দেশীয় সম্পদ লুটপাটই আওয়ামী লীগের জীবিকা উপার্জনের উপায়। আর এ কারণেই তারা বিরোধী কর্মসূচি ও বিরোধী কণ্ঠকে দমানোর জন্য হিংসাযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, জীবন এখন জেগে উঠেছে। অখণ্ড শান্তি বিরাজ করতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান অবৈধ সরকার ও তার প্রধানের নির্জলা মিথ্যা বলার বিশ্বচরাচরে কোনো দৃষ্টান্ত নাই। দুঃশাসন ও দুঃসময়ের স্রষ্টা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন অনিবার্য করে তুলতে হবে। বিএনপি ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে মাঠে নামাটা এখন জনগণের দায়িত্ব। আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের প্রবল স্রোত তৈরি হবে।
এমএইচ/এসজি