গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে: খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু জনগণ সরকারকে বার্তা দিয়েছে যে তারা সরকারকে চায় না। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। জনগণ গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে প্রস্তুত। কর্মসূচি আসবে। আমরা এখন চাল, ডাল, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করছি। কিন্তু আগামী আন্দোলন হবে সরকারের পতনের আন্দোলন।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত 'শহীদ ডা. মিলন-গণতন্ত্রের মুক্তি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ডা. মিলন শহীদ হয়েছেন কেন? তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় খালেদা জিয়ার আহ্বানে সারা দেশে আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মিলন। তার শাহাদাতের মধ্য দিয়েই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেয়। মিলনসহ আরও ছাত্র ও শ্রমিক নেতার জীবন দেওয়ার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছিল। খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাব ছিল এর নেপথ্য কারণ। এরপর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন। মানুষ খুশিমতো ভোট দিতে পেরেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় এসেছিল। এরপর শুরু হলো চক্রান্ত।
তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আমাদের নেত্রী বিদেশে যাননি। তাকে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছিল। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকার নাকি তাদের আন্দোলনের ফসল। তারপর তারা ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির ৬'শর বেশি লোক গুম। ১ হাজারের বেশি মানুষ খুন। খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। টাকা লুট আর পাচারে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বেড়েছে। দারিদ্র্যতা বেড়েছে। ৪০ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো সংকটের সমাধান হবে না। যারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা এর পুনর্গঠন করতে পারবে না। দেশে বিচারব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মিলনের সহপাঠী অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, ডা. মিলন স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। সে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত। কিন্তু তার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশ। আজো চলমান আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদরকে সেই রকম আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসুন এই শপথ করি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুলের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শাহিদুর রহমান, সহসভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. পরিমল চন্দ্র মল্লিক, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. একেএম কবির আহমেদ রিয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বিলকিস জাহান চৌধুরী, অ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. মাহাতাব উদ্দিন প্রমুখ।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ড্যাবের ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. আদনান হাসান খান মাসুদ, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, যুবদলের ওমর ফারুক মুন্না, অ্যামট্যাবের দবির উদ্দিন তুষারসহ ড্যাবের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এসজি