‘প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন’
ফাইল ছবি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের উদগ্র ক্ষমতালোভের কারণে তারা জনগণের প্রতি অমানবিক অবজ্ঞা করে আসছে। এরা গণতন্ত্রের প্রাণ হরণ করে গোটা জাতিকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে। দেশে চলছে এক ভয়াল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তার তাদের জন্য অপরিহার্য।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপনকে নির্বিঘ্ন রাখতেই ক্ষমতার আড়ালে মহাদুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। গণতন্ত্রকে কঙ্কালে পরিণত করে দেশ ও জনগণের ভবিষ্যতকে বরবাদ করার জন্যই চিরস্থায়ী ক্ষমতার বলয় তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। অবৈধ সরকারের রক্তচক্ষুর দানবীয় তাণ্ডবে বিরোধী দল, ভিন্ন মত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার সবকিছুকেই ডাকাতি করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার উন্মাদ লীলায় গ্রামে-গঞ্জে-হাটে-ঘাটে-বন্দরে-বাজারে-শহরে লাশ পড়ছে, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ওত পেতে থাকা শিকারি বাঘিনীর মতো বিএনপির মিছিলের উপর নির্দয় হৃদয়হীন পুলিশ গুলি চালিয়ে জীবন কেড়ে নিচ্ছে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী নেতা-কর্মীদের।
তিনি বলেন, নিপীড়নে নিমজ্জমান মানুষের অনুচ্চারিত যন্ত্রণায় আনন্দিত হন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সর্বনাশা আশকারার কারণেই দেশব্যাপী রক্তের স্রোত বইছে। সন্ত্রাসী দুঃশাসনের ছায়ায় গ্রাস হয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অহম ও ক্ষমতালিপ্সা বাংলাদেশের চেয়েও প্রিয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। একতরফা ও নিশিরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার কারণেই বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুখমণ্ডল ম্লান হয়েছে। বর্তমান বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনগণের যে নবতরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি ক্রোধে-ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। জনতার এই উত্তাল ঢেউ দেখে শেখ হাসিনা শঙ্কিত হয়ে মনে করছেন ঘুষ-দুর্নীতি-পুঁজি লুণ্ঠনের যে অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন বাংলাদেশে সেটি হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে কারণেই বিরোধী কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গেস্টাপো বাহিনীর মতো হত্যার লাইসেন্স দিয়ে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ লজ্জা-শরম হারিয়ে এখন স্বঘোষিত দেশ নেতা হয়েছে।
রিজভী বলেন, অনাহার, অর্ধাহার, ডেঙ্গু ও রোগ-শোকে ধুঁকছে দেশের লোক, ঝরছে শিশুর প্রাণ, সারা দেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠিত। মানুষের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকারকেও এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার জমিদারি শাসনে গণতন্ত্র মরণাপন্ন। দেশের জনগণ এখন পরাধীন। মামলা-হামলা, ধরপাকড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঘুম কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তারা কেউ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছেন না। বাসা ও বাড়ির মহিলা সদস্যরা পর্যন্ত পুলিশি অসদাচরণের শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রাজবন্দীদের উপর অত্যাচার অব্যাহত রাখা।
তিনি আরও বলেন, ভিন্নমতের প্রতি এই সরকারের আক্রমণাত্মক আচরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিবাদী স্বরকে থামিয়ে দেওয়া, বিরুদ্ধ মত পেশের কোনো পথ না রাখা। দেশের জনগণ এখন রাগ-ঘৃণা ও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার চলতে থাকলে যেকোনো সময় প্রতিশোধের অগ্ন্যুৎপাতের মহাপ্লাবন বয়ে যাবে।
পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে (মহানগরগুলোতে) বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তবে রাজশাহী ও কুমিল্লা বিভাগীয় সদর ওই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
এমএইচ/এসজি