গান-স্লোগান মুখরিত সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ
মেলার আদলে একটি মাঠ। মাঠের ভিতরে স্টলের মতো তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি তাঁবু। মাঠের এক প্রান্তে বিশাল একটি মঞ্চ। এমন দৃশ্য দূর থেকে দেখলে কোনো মেলার মাঠ মনে হলেও আসলে মাঠটিতে কোনো মেলা হচ্ছে না। সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এভাবেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দরা সাজিয়েছেন মেলার আদলে নিজেদের ক্যাম্প। কেউবা ক্যাম্পের ভেতর থেকে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউবা মাঠের মধ্য খানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। আবার অন্য একটি ক্যাম্পে আয়োজন হচ্ছে সঙ্গীতানুষ্ঠান। সব মিলিয়ে পুরো মাঠজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে প্রায় ১০টার দিকে বিএনপির গণসমাবেশ স্থল আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। নেতা-কর্মীরা বলছেন, গণসমাবেশে সফল করতে তারা ৫ দিন আগে থেকেই অবস্থান করছেন সিলেটে। তবে বুধবার থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দরা নিজেদের ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান করছেন মাঠেই। রাতে এই সব ক্যাম্পগুলোতেই রাত্রি যাপন করবেন তারা।
মাঠের জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানার সাঁটানো ক্যাম্পে কথা হয় সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্র নেতা আবদুল আহাদ খান জামালের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘গণসমাবেশ সফলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও দফায় দফায় মাঠ পরিদর্শন করছেন। প্রচার-প্রচারণাও চলছে সমানতালে। মোট কথা এই গণসমাবেশ জালিম সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু পরিকল্পিত এই ধর্মঘট গণসমাবেশ সফলে বাঁধা হয়ে দাড়াবে না। কারণ ইতিমধ্যে গোটা বিভাগে ৩০ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল প্রস্তুত রয়েছে।’
এদিকে গণসমাবশের একদিন আগে সিলেটে শেষ হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ইজতেমা। ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামের একটি ধর্মীয় সংগঠনের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে নগরের দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ইজতেমা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। তবে পুলিশ বলছে, শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যেই ইজতেমা শেষ করতে হবে। মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফের সঙ্গে বৈঠকে শেষে আয়োজকদের উপর এমন শর্ত আরোপ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতৃবৃন্দরা বলছে, ইজতেমার আগে থেকেই জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীরা অবস্থান করছে সিলেট। তাদের দাবি-সারাদেশের মতো সিলেটের গণসমাবেশ ঠেকাতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসতে পারে, এমনটি ভেবেই নেতা-কর্মীরা গণসমাবেশের পাঁচ দিন আগে থেকেই অবস্থান করছেন সিলেটে। তবে ইজতেমার উপস্থিতিকে বাড়তি প্রাপ্তি বলে মনে করছেন তারা। সেই হিসেবে পরিবহন ধর্মঘটকে কোনো রকম বাঁধা হিসেবে দেখছে না বিএনপি।
এদিকে বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ ছাড়াও আশপাশের রাস্তায় মানুষজনের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এ কারণেই বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা, প্রচারপত্র বিতরণ, প্রচার মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
গণসমাবেশকে সফল করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। ছয়টি কমিটিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট বিভাগের দায়িত্বরত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সহ-সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গৌছ, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ সম্পৃক্ত আছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ প্রচারমিছিল ও প্রচারপত্র বিতরণে বাধা দিচ্ছে। তবে কোনও বাধা-বিপত্তি গণসমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশ সফলে কাজ করছেন। নগরজুড়ে ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন সাঁটানো এ প্রস্তুতিরই অংশ।
এসআইএইচ