প্রধানমন্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় সদরে গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তার কথাবার্তায় সৌজন্যবোধ দূরে থাক, ন্যুনতম রাজনৈতিক ভদ্রতা প্রকাশ করেননি। গত পরশু যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে যে ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা সম্পূর্ণরুপে সুরুচি ও শিক্ষার আলো বঞ্চিত প্রতিহিংসা পরায়ণ বস্তির মানুষের পক্ষেই সাজে। ব্যক্তির ভাষা প্রয়োগের ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়-তার পারিবারিক সংস্কৃতি কী? কোনো ধরনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্লীল, অসভ্য, অশোভন বক্তব্য রাখা যায়।’
রবিবার (১৩ নভেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা যুবকদের কর্মসংস্থান করেছেন, বিএনপি করেছে’। অথচ বাংলাদেশ এখন বেকারের কারখানা, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারের সংখ্যা বাংলাদেশে। শিক্ষিত বেকাররা চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করছে, যুবক-তরুণদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও হত্যার যে দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা রেখেছেন তা বিশ্বের সকল স্বৈরাচারের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।’
রুহুল কবির বলেন, ‘সারাদেশের জেলায় জেলায় বিএনপির অসংখ্য তরুণ নেতাদেরকে আপনার নির্দেশে পুলিশ অথবা র্যাব অথবা যুবলীগ-ছাত্রলীগ হত্যা করেছে। এ সম্পর্কে আপনি আপনার বক্তব্যে তো কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী?’
এ ছাড়া, সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হীরু, চৌধুরী আলম, সুমন, মুন্না, জাকির, হুমায়ুন পারভেজসহ অসংখ্য বিএনপির আইন প্রণেতা, জনপ্রতিনিধি, অসংখ্য যুবক-ছাত্রকে গুম করার কি জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী?
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। সমাবেশগুলোতে এত বাধা দিয়েছেন, সমাবেশে যাওয়ার পথে আপনার লালিত যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে জনগণ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর যে সহিংস আক্রমণ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন, আহতদের অনেকেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, এর কি জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী? যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডাকে না, কিন্তু বিএনপির গণসমাবেশের ৩০/৩২ ঘন্টা আগে থেকেই ধর্মঘট ডাকা হয়, এটা কার নির্দেশে ডাকা হয়-সেটাও জানে দেশবাসী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার মন্ত্রী-নেতারা বলেন, বিএনপি নেতারা নাকি ১৩ বছরে ১৩ মিনিটও রাজপথ দখলে রাখতে পারেনি। তাহলে আপনার নিকট আমাদের প্রশ্ন, সেই বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে, তখন বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ করা হয় কেন? আপনি এর কী উত্তর দিবেন প্রধানমন্ত্রী?
এই আচরণগুলোকেই জনগণ বলে, হাসিনা মার্কা গণতন্ত্র। আপনার অপকর্ম ঢাকতে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে আপনি যে কুৎসা রটান সেটি জনগণ জানে। আপনি জনগণকে বোকা বানাতে চাইলেও জনগণ সঠিকটাই উপলব্ধি করে।
রিজভী বলেন, সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গণসমাবেশগুলোতে জনতার ঢল অভুতপূর্ব। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। ফরিদপুরের জনসভায় দুইদিন আগে থেকেই কমরপুর আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউশন মাঠে জনতার একের পর এক ঢল আসতে থাকে। আশেপাশের বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা রান্না করে তাদের খাইয়েছে।
অনেকেই আশেপাশের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। মূল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দুরে সমাবেশস্থলে মনে হয়েছে গোটা ফরিদপুর শহরসহ আশপাশের এলাকায় মানব-বন্যা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী এসব দেখেই মূলত: হতাশ হয়ে ক্রোধে-প্রতিহিংসায় বেসামাল হয়ে পড়েছেন। আর এ জন্যই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এত অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ।
শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য নাম তারা। শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে যতই কথা বলবেন ততই তিনি দেশের মানুষের কাছে ঘৃণিত হবেন।
রিজভী বলেন, সরকারের হীন মানসিকতার প্রকাশ ঘটছে প্রতি মুহূর্তে। বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে জনগণের বিপুল সমাগম দেখে আওয়ামী প্রশাসন দমনের নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণে অসংখ্য বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এমএমএ/