মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা
গণসমাবেশে উজ্জীবিত বিএনপি নেতা-কর্মীরা। নানান প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সফল করছেন সভা-সমাবেশ। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। তবে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হামলা মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক। অনেক স্থানে নেতা-কর্মীরা সমাবেশের আগে ও পরে হামলার শিকার হয়েছেন।
নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে করে নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুরোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। মামলায় হাজিরা দিতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। কিছু কিছু মামলায় দ্রুত গতিতে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগপত্র। এমনকি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১৪টি মামলা বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি যাতে ফের সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য নতুন করে মামলা ও গ্রেপ্তারের কৌশল নেওয়া হয়েছে। সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী সমর্থক পেশাজীবীদেরও মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করছে। নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা-সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে বাড়তে পারে গ্রেপ্তার ও মামলা। বিশেষ করে ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে এ মাত্রা বাড়তে পারে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করতেই নেতা-কর্মীদের চাপে রাখার কৌশল হিসেবে মামলা ও গ্রেপ্তার করছে সরকার। যদিও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপির এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের নেতারা বলছেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। আর আইন অনুযায়ী মামলার বিচারকাজ চলছে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ বা বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নেই। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আন্দোলনের নামে কেউ জ্বালাও-পোড়াও করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির গণজোয়ার দেখে সরকার দিশেহারা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ফের মামলা, হামলা ও গ্রেপ্তারকে অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে। নেতা-কর্মীদের চাপে রাখতে সামনের দিনগুলোয় এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু এসব ভোঁতা অস্ত্র ব্যবহার করে গণ-অভ্যুত্থান ঠেকানো যাবে না। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। এ সরকার পতন নিশ্চিত করেই তারা ঘরে ফিরবে। কোনো বাধাই এবার নেতা-কর্মীদের আটকাতে পারবে না। গণবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি ক্ষমতার প্রবল প্রতাপ জনগণ বেশিদিন সহ্য করে না। ইতিহাস তাই বলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজপথের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। তাদের এ কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতময় হয়ে উঠেছে মাঠের রাজনীতি। রাজধানীতে কিছুটা বাধাহীন কর্মসূচি পালন করতে পারলেও বিভাগীয় শহর ও জেলা পর্যায়ে পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কখনো পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হচ্ছে; আবার কখনো সংঘর্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিও করা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। এভাবেই পুরোনো মামলার সঙ্গে নতুন নতুন মামলার জালে আটকে যাচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন। যাদের নামে মামলা করা হয়েছে এবং যাদের নাম আসেনি সবাই নিজ বসতবাড়ি থেকে সরে থাকছেন বলে জানা গেছে। নেতা-কর্মীদের ধারণা তাদের মধ্যে আতঙ্ক বা ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে নানা কৌশল নিতে পারে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতিদিনই আমাদের নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তুলে নিয়ে কয়েকদিন গুম রাখার পর গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। জামিন বাতিল করে নেতা-কর্মীদের জেলে পুরছে। সারাদেশে প্রতিদিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আওয়ামী পুলিশ। বাড়িতে অভিযানকালে হয়রানি, দুর্ব্যবহার করছে। নারীদের অপদস্থ করছে।
তিনি বলেন, দলের ‘প্রত্যেক নেতা-কর্মীর’ বিরুদ্ধে শত শত মামলা। সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের দলের নেতা-কর্মীরা বিপর্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখী আচরণে নেতা-কর্মীরা একটু নিরাপদ দূরত্বে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে হচ্ছে। তবে নেতা-কর্মীদের মনোবল অটুট আছে। তারা যেকোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত।
এমএইচ/এসএন