‘মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা (বিএনপি) ও দেশের মানুষ এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কোনো নির্বাচন হবে না যতক্ষণ নিরপেক্ষ সরকার না হবে। আমরা চাই এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পদত্যাগ।
শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুরে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ সব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সরকার করতে চাই। এই সরকার পতনে যারা আন্দোলন করবে বিজয়ী হলে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। সরকার গঠন করে আমরা রাষ্ট্রকে মেরামত করতে চাই, বিচারবিভাগ, প্রশাসনকে নতুন করে সাজাতে চাই, অর্থনীতিতে দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এদিন ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বেলা ১১টায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে বিএনপি। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ূম।
তিনি বলেন, আমরা অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি, আর কোনো অন্যায়-অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করব না, আমরা রুখে দাঁড়াব। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। এক দফা এক দাবি— শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে ফয়সালা করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় বলা হয়— বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, অথচ এই তোমরাই (আওয়ামী লীগ) হচ্ছো অগ্নি সন্ত্রাসের হোতা। তোমরা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছ, লগি বৈঠায় নেচে নেচে ১/১১ সরকার আনতে ষড়যন্ত্র করেছ।
খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে রাখা হয়েছে। জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ গতকাল দেখলাম যুবসমাবেশে ক্যাসিনোর মাধ্যমে যারা টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে সেই সম্রাট জামিনে বের হয়ে শেখ হাসিনার সামনে বসে থাকে, আর যারা গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করছে তাদের আটকে রাখে, জামিন দেওয়া হয় না। অতীতেও কেউ জোর জবরদস্তি করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে পারেনি। খুন, গুম করে আপনারাও রেহাই পাবেন না।
তিনি বলেন, আজকে দেশে কোথায় চুরি করে না? মেগা প্রজেক্টে চুরি, গ্রামে বেকার ভাতা, বৃদ্ধ মহিলাদের ভাতা সেখানেও চুরি, ঘুষ দিতে হয়। কোথাও তাদের টাকা নেই, সবকিছু খেয়ে ফেলেছে। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে চুরি দুর্নীতি করে না। টাকা, ঘুষ, কমিশন না দিয়ে কাজ হয় না। কথায় কথায় বলে মধ্য আয়ের দেশ। মধ্য আয়ের দেশে কারা গেছেন? যারা দুর্নীতি করছে চুরি করছে তারা গেছেন।
‘ওবায়দুল কাদের উনি যুব সমাবেশে বলেছেন তারা নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে কাজ করছেন। অথচ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে চায় এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। তারা গণতন্ত্রের সংজ্ঞার কথা বলে, গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কি— এটা অন্য দলকে কিছু করতে দেব না। হায় রে আওয়ামী লীগ ও তাদের গণতন্ত্রের আওয়ামী লীগ।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপির গণসমাবেশে পথে পথে বাধা, সিকিউরিটি চেক পোস্ট, কোথায় যাবেন, রাস্তা বন্ধ। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে তোমরা যে যাই বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই, কিন্তু সেটা আর হবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে কোনো সভ্য দেশে রাষ্ট্র প্রধানদের কার্টুন আঁকা হয়, নাটক হয়, সেখানে গ্রেপ্তার করা হয় না। এটাই তো বিউটি, সহনশীলতা। বললে কারো কারো খারাপ লাগে আর এরা মনে করে দেশটা তাদের বাপের দেশ। তারা যে ভাষায় কথা বলেন, সেটা গণতন্ত্র ও সহনশীলতার ভাষা নয়।
এমএইচ/আরএ/