দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়: খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের ব্যর্থতার কারণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্থান। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে 'বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব' শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৭ নভেম্বর। যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৭২-৭৫ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। এরপর দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। তাদের নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি। সেসময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। রক্ষী বাহিনী দিয়ে ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা কারা ঘটিয়েছে এটা পরবর্তী সরকার যারা প্রতিষ্ঠা করেছে সেখানে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। এরপর ২ নভেম্বর রাত থেকে ৩রা নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে সেনাবাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটে। এসময় জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে ও তাকে বন্দী করে। অনেক ঘটনা পাল্টা ঘটনা ঘটে। সেসময় ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ছিল না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিল।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঠিক সেসময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুটি বিষয় দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত- জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লব। অর্থাৎ দুইটি বিশেষ দিনে জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তেমনি ৩-৬ নভেম্বর যখন রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা তখনো জিয়াউর রহমান জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সিপাহি জনতা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই দিনকে গুরুত্ব না দিয়ে 'মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস' পালন করছে। আসলে তারা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সহ্য করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটি আধুনিক উন্নত ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করেছিলেন। অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে শিল্প খাতে বিনিয়োগ করেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মানুষকে সংগঠিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন। গ্রাম সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেনাবাহিনীতে আধুনিকায়ন করেন। আজকে আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করছেন। অর্থাৎ যেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা ব্যর্থ। সেখান জিয়াউর রহমান সফল। যার প্রমাণ ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকেও দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে অবৈধ ভোট ডাকাতির সরকার। তারা অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। আমার যেসব বিষয় নিয়ে এতদিন বলে আসছি। আজকে আইএমএফ কিন্তু সেগুলো নিয়ে ঠিকই প্রশ্ন করছে। কেন তেলের দাম বেড়েছে? কেন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয় না? আর আজকে গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী বলছেন দেশে দুর্ভিক্ষ আসবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। কারণ এই সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ। দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের একটি সংস্থা ও র্যাবের কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এখান থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। আজকে তারা দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের চিন্তা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে লেগে আছে। আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই সরকার এমনিতে যাবে না। আইয়ুব খান যায়নি। এরশাদ যায়নি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিদায় হয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে হবে। পরিবর্তন করতে হলে তাদেরকে সরানোর বিকল্প নেই। তাদের অন্যায় অপকর্মের বিচার দেশের মাটিতে হবে। আসুন আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করি। সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। দেশের মানুষ ভোট দিবে ব্যালটে কোনো মেশিনে নয়।
অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল। নানা সংকটে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। দেশে চলছিল ক্যু পাল্টা ক্যু। এমনি এক পরিস্থিতিতে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে তার দক্ষ নেতৃত্বে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তার সময়ই দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুসংহত হয়।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদিরের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহিদুল আলম, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. আদনান হাসান মাসুদ, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. শহিদুল ইসলাম, ডা. শহিদুর রহমান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল প্রমুখ।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ডা. নিলোফা ইয়াসমিন, প্রকৌশলী খালিদ হাসান পাহিন, আমিনুল ইসলাম, ডা. শহিদুল হাসান বাবুল, ডা. আবুল কেনান, ডা. মো. শামসুল আলম, ডা. রিদওয়ানুল ইসলাম, ডা. সরকার মাহবু আহমেদ শামীম, ডা. দিদারুল আলম, ডা. শহিদুল ইসলাম, ডা. হারুন অর রশিদ রাকিব, ডা. আবু হেনা চৌধুরী, ডা. শাকিল রহমান, ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তরিকুল ইসলাম তারিকসহ ড্যাবের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এসজি