আইন-আদালত, প্রশাসন সবই এখন গণভবনে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার কথায় আবারও স্পষ্ট হলো দেশে আইন-আদালত, হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট আর প্রশাসন সবই এখন গণভবনে। রাষ্ট্রের প্রতি বিভাগে আওয়ামী চেতনা ঝড়ের বেগে সংক্রমিত হয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়া কোনো অপরাধের কারণে নয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বন্দী। তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিচারের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে আটকে রাখা হয়েছে দেশনেত্রীকে।’
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আইন ও বিচার ব্যবস্থা তার হাতের মুঠোয় জিম্মি, তিনি ইচ্ছা করলে কাউকে জেলে দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে কাউকে জেলের বাইরেও রাখতে পারেন। হীরক রানির দেশে তিনি যা ইচ্ছে তাই করছেন। আইন-আদালত, প্রশাসন সবকিছু তার হুকুমের গোলাম, কেউ স্বতন্ত্রভাবে তাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। ১৪ বছর আগে ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সেই মামলাগুলো আজ কোথায়? ওই মামলাগুলো উনি চিবিয়ে খেয়েছেন। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ২ কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে এখন হুংকার দিচ্ছেন আবারও জেলে পাঠাবেন। আপনার আমলে দেশ থেকে সরকারি হিসাবে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কোনো ব্যাংকে ডলার নেই, এক ব্যাগ রক্তের দামের চেয়ে এক কেজি চালের দাম এখন অনেক বেশি। শেখ হাসিনার উন্নয়নের সরকার মূলত বাঁশবান্ধব সরকার। কারণ অধিকাংশ মেগা প্রকল্পে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুংকার দিয়ে বলেছেন, ‘বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে আবারও খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেব।’ এক সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘নিশিরাতের জবরদস্তি সরকার বুঝে গেছে এবার তাদের আর রেহাই মিলবে না। গুম, খুন, মামলা-হামলা, লুটপাট, টাকা পাচার আর মহাদুর্নীতির কালযাত্রা যবনিকাপাত ঘটতে চলেছে। পতন তাদের অনিবার্য। পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর জীবনধারণের সব অবলম্বন হারিয়ে সারা দেশের সর্বহারা মানুষ চাল, ডাল, চিড়া, মুড়ি, হাঁড়ি পাতিল, কাপড়, পোটলা নিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে পথে নেমেছে, এগিয়ে আসছে বিএনপির সমাবেশস্থলের দিকে।’
তিনি বলেন, ‘বন্দুকের নল, কোনো রক্তচক্ষু বাধা বিপত্তি তাদেরকে প্রতিহত করতে পারবে না। ক্ষোভের লেলিহান আগুন জ্বলছে প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে, অন্তরে-গহীনে। গাড়ি আটকে দিলে আসছে নৌপথে। নৌপথে বাধা দিলে হেঁটে রওনা দিচ্ছে। সাঁতরে পার হচ্ছে নদী। রাস্তা বন্ধ করে দিলে বিল মাঠ পেরিয়ে আসছে, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকছে। সারা রাত সমাবেশের মাঠ দখল করে ফ্যাসিবাদীদের থেকে নিজেদের আদায়কৃত জায়গা রক্ষা করছে। তাদের স্লোগান শুধু স্লোগান নয়, যেন ১৮ কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখেনি কেউ। ঊর্মিমুখর জনস্রোত থেকে উত্থিত ক্ষোভ-দ্রোহের অগ্নি নিঃশ্বাস শেখ হাসিনাকে দগ্ধ করতে শুরু করেছে। এই পরিবেশ-দৃশ্যপট ভোটারবিহীন মাফিয়া সরকারকে রীতিমতো নিদ্রাহীন ও অস্থির করে দিয়েছে। বেসামাল হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা ও তার পরিষদ। শেখ হাসিনা স্বভাবজাত প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও হিংস্রতা প্রদর্শন শুরু করেছেন আবার।’
‘কয়দিন আগে প্রধানমন্ত্রী আত্মস্বীকৃতি দিয়েছেন যে, বাড়াবাড়ি করলে ‘হেফাজতের মতো বিএনপিকে’ দমন করা হবে। এই হুমকি প্রমাণ করে যে, তিনি আবার ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো ইতিহাসের রক্তাক্ত গণহত্যাযজ্ঞ চালাবার পাঁয়তারা করছেন। রাতের অন্ধকারে কিশোর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর কথা স্বীকার করেছেন, খালেদা জিয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এখন বাকি আছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারাক্তি। জনগণের কাঠগড়ায় আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পতনের ভয়ে কম্পমান হয়ে কোনো ভয় দেখিয়ে আর আন্দোলন বন্ধ করতে পারবেন না। মানুষ ঘর ছেড়েছে, তারা পতন ঘটিয়ে তবে ঘরে ফিরবে। শহীদের রক্তপণ শপথ নিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তি এবার শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে।’
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন আওয়ামী সরকার একটি অপরাধপ্রবণ সরকার। এরা গুম-খুন অপহরণ করে, গোপন বন্দীশালা ‘আয়নাঘর’ বানিয়ে, বিনা ভোটে একযুগেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটপাট আর লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এতদিন মেকি উন্নয়নের গালগল্প শোনালেও এখন দেখা যাচ্ছে আওয়ামী বাচলতা ছাড়া দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা চাপাবাজির রাজনীতিকরণে ব্যস্ত। দেশে বিরাজ করছে সরব দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ছাত্রদলের মশাল মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র গুন্ডারা। হামলা থেকে বাঁচতে গাড়িচাপায় মারা যায় রুপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইমন হাসান অনীক। এটি যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্তৃক সরাসরি হত্যাকাণ্ড। আহত হন ছাত্রদল নেতা আবু হানিফ, আপু মিয়া, আমির হোসেন প্রমুখ। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনীকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
এমএইচ/এসজি