‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা তারা মানুষের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মিছিল-মিটিংয়ের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার শুধু হরণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং মানুষের বাঁচার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে নাটোর উপশহর মাঠে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, একসময় মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনত অথচ বর্তমানে দেশে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ সেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে। অধিকাংশ মানুষই এখন এক বেলা খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে।
বিদ্যুতের নামে যে তেলেসমাতি করা হয়েছে তা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ঢাকায় এখন দিনে ৬ ঘণ্টা আর রাতে ৪-৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশের বিদ্যুৎ গেল কোথায়? সরকার ঘোষণা করেছিল যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। এজন্য কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। তাহলে সেই বিদ্যুৎ গেল কোথায়?
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। এর কারণ হলো দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এবং এতে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ বিরাজ করছে তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। ওই দুর্ভিক্ষের ভয়ে মানুষ যাতে থেমে যায় সে জন্যই ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছেই। কেননা সারা দেশে সব কিছুরই মূল্য অসহনীয়। অথচ সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বিএনপি যখন যেখানে সমাবেশ ডাকছে সেখানেই বাধা দিচ্ছে সরকার আর সরকারের ছাত্রলীগ, যুবলীগ। এরপরও লাখ লাখ মানুষ বিএনপি সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।
বিশ্ব রাজনীতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিরোধীদল সরকারের সমালোচনা করবে, সরকারের অসঙ্গতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ এমন প্রচলন বিশ্বে থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশ তার উল্টো। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরোধীদল ধর্মঘট ডাকলেও বাংলাদেশে বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে তখন ওই হরতাল, ধর্মঘট ডাকে সরকার আর সরকারি দল।
রিজভী বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে বিএনপি যদি তাদের একজন কর্মীকে মারে তাহলে তারা বিএনপির ১০ জনকে মারবে। ওই কারণেই দেশব্যাপী বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা করছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী, দেশের মানুষের প্রধানমন্ত্রী নন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন ওইসব হামলাকারী, খুনিদের মাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন সব সন্ত্রাসের গডফাদার।
দেশব্যাপী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও সারা দেশে বিএনপি নেতাদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত ওই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সম্মানীত সদস্য ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সহধর্মিনী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রুহিম নেওয়ার এবং যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম প্রমুখ।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র এমদাদুল হক আল মামুনের সভাপতিতে ওই সমাবেশটি নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে শুরু হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে সরকার দলীয়দের হামলার শিকার হয়েছে বলে দাবি করেন সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। দলের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে এবং তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এসজি