কোনো কিছুর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই: ফখরুল
প্রশাসনসহ কোনো কিছুর ওপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'এতো বেশি দূর্নীতি সবখানে- প্রতিটি খাতে, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের এখন এই অবস্থার প্রেক্ষিতে এটা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সব খানেই আপনার এতো বেশি দুঃশাসন হয়েছে, মিস রুল হয়েছে যে, না্থিং ইজ আন্ডার দেয়ার কন্ট্রোল।'
'অর্থাৎ তাদের (সরকার) কোথাও কোনো ম্যানেজমেন্ট নাই। তারা সমস্ত কিছুতে দুর্নীতি করেছে। যার ফলে কনট্রোল ওভার দ্যা হোল এডমিনিস্ট্রেশন যেটা সম্পূর্ণভাবে ধবংস হয়ে গেছে।'
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ২০ দলীয় জোটের দুই শরিক দল এনডিপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
আগামী বছর খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে-প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, 'উনি কেনো এটা বলছেন, আমরাও বুঝতে পারছি না। কিছুদিন আগে উনারা দাবি করেছে যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছেন। আজকে কি এমন ঘটলো যে উনারা এখন ভয় পাচ্ছেন যে খাদ্যসংকট দেখা দেবে'
সরকারের দুর্নীতির কারণেই লোডশেডিং চরমে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যে কারণে বিদ্যুতের একই অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, আজকে বিদ্যুত তারা দিতে পারছে না। দেয়ার ইজ অনলি রিজন।'
শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাসভবনের নির্মাণ ব্যয় প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, '৮ হাজার কোটি টাকায় ইভিএম কিনতে যাচ্ছে একটি জালিয়াতির ভোট করার জন্য। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আর মূখ্য সচিবের বাড়ি তৈরি করার। আপনি কি আশা করেন? এটা আনবিলিলেবল, অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রে। একটা দুইটা নয়, সমস্তখাতেই আজকে দুর্নীতি চলছে।'
তিনি বলেন, 'এই সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে। আমি আজকের কথাই বলি আমার নিজের কথা। আমি আজকে সকাল ৯টায় উত্তরার বাসা থেকে বেরিয়েছি। এই যে নতুন রাস্তার (উত্তরা) কথা যার কথা আমি বার বার বলছি আপনাদেরকে। গত ১০ বছর ধরে জনগনকে ভোগান্তি দিচ্ছে। ওইটা উত্তরার রাস্তা পেরিয়ে আসতে আমার দুই ঘন্টা লেগেছে। তারপরেও পুরোটা আসতে পারিনি। আমাকে রিকশা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছন দিক দিয়ে আসতে হয়েছে। গাড়ি রেখে আসতে হয়েছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গণসমাবেশ দেখে ওদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহে জনতা ঢলের মতো নেমে এসেছে। ময়মনসিংহে যে কাজটা ওরা করেছে তা আপনারা সবাই জানেন। সেখানে অঘোষিত কারফিউ ঘোষণা করেছে। একটা গাড়ি-ঘোড়া কিছু চলতে দেয়নি। সেখানে আগের রাত্রে আমাদের বর্ষিয়ান জননেতা নজরুল ইসলাম খান সাহেব যে হোটেলে ছিলেন সেই হোটেলে গুলিবর্ষন করেছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছে। তারপরেও তারা কিন্তু কোনোই বাঁধার সৃষ্টি করতে পারিনি।'
'উল্টো দেখেন পুলিশকে তারা (ক্ষমতাসীনরা) কিভাবে ব্যবহার করে? আমাদের ৪৩৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এভাবে দমন করে, গুলি করে, হত্যা করে, গুম করে কোনো দিনই ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না যতই তারা শক্তিশালী হোক।'
তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটার উত্তর আমি দেবো না। ইট ইজ নট মাই বিজনেস।'
এদিকে মঙ্গলবার সকালের সংলাপে এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী নিজ নিজ দলের ১০ সদস্যের নেতৃত্ব দেন।
এনডিপির অন্য সদস্যরা হলেন, আবদুল্লাহ আল হারুন, মজিবুর রহমান, মুসা মন্ডল, জামিল আহমেদ, আলী আকবর, সুলতানা পারভীন, মিজানুর রহমান পাটোয়ারি, আব্দুল আজিজ ও হাফেজ আবু সাঈদ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন, মওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, আল্লামা শেখ মজিবুর রহমান, মওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী, মওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মওলানা আব্দুল হক কাওসারী, মওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস, মুফতি জাকির হোসাইন খান ও মওলানা আতাউর রহমান খান।
দুই সংলাপে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় দফা সংলাপে এই পর্যন্ত জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাগপা, মুসলিম লীগের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব।
এমএইচ/এএস