সরকার পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করছে: ফখরুল
সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ অনির্বাচিত বর্তমান সরকার গোটা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। এদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের চান তারাই ক্ষমতায় আসবে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। একজন নারী ফেসবুকে পোস্ট করায় রাতের বেলা তাকে ধরে নিয়ে যায়। আজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে সরকার।
আলেম ওলামাদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজ আমাদের দুঃখ হয়। শুধু ইসলামের পক্ষে থাকার কারণে অনেক আলেম ওলামাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব কথা কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা ও পাঠাগার তৈরি করেছিলাম। মন্দিরেও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সরকার বাহবা নিতেছে যে তারা কওমি মাদ্রাসার জন্য অনেক কাজ করেছে। কওমি মাদরাসার দাওরা শিক্ষাকে মাস্টার্সের সম্মান দিয়েছে। কিন্তু এই কাজটা বিএনপির আমলে প্রায় শেষ হয়ে যায়। আজকে আলেমদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার সেই কাজটিই ভালোভাবে করে। আজকে তারা গোটা দেশকেই বিপন্ন করে ফেলেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির কোনো খবর যাতে প্রকাশ না হয়। এমনিতেই চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোতে বলে দেওয়া হয় কোন খবর যাবে কোনটা যাবে না। খবর পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করে। আর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আসলে সরকার গোটা দেশে বর্গীদের মতো লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় যারা বিএনপি করে এমন ৮ জন, অর্থদাতা ৫ জনের নামের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। এটা কি গণতন্ত্র?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি সংগঠন নিহত আবরারের স্মরণে কর্মসূচি পালন করতে গেলে তাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পিটিয়েছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। তারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছে। দেশে অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইমাম সাহেব কী খুতবা পাঠ করবেন সেটাও নির্ধারণ করা হয়। পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এটা কি ধর্মীয় স্বাধীনতা? প্রকৃতপক্ষে আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করি। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। কারণ নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। তাদের থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পথ হলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক সভাপতিত্ব করেন। দলের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মাওলানা আলমগীর হোসেন, আবু বকর চাখারী, ইখলাস উদ্দীন বাবুল, এনামুল হক মাজেদী, মাওলানা কাজী মোশারেফ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কারি সিরাজুল ইসলাম, কাজী মোস্তফা জামাল খোকন মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলী, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
এসএন