নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই মিয়ানমার হামলা চালাচ্ছে: ফখরুল
বর্তমান সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গোলাবর্ষণ ও মর্টার শেল নিক্ষেপে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, মিয়ানমারের এই ঔদ্ধত্য প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, স্বাধীন-সার্বভৌম-ভৌগোলিক ভূখণ্ড রক্ষার্থে মেরুদণ্ড সোজা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।’
তিনি বলেন, ‘ম্যানটেন করছে না বলেই বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফোরামে সংঘটিত বিষয়গুলো উত্থাপন করতে পারেনি। আমরা আগেও বলেছি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার প্রধানের সেই সব রাষ্ট্রগুলো সফর করা উচিত যাদের সঙ্গে মিয়ানমারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে, সেখানে চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু সেখানে কিছু হচ্ছে না। আমরা মনে করি এই সরকার সম্পূর্ণভাবে একটা নতজানু সরকার। যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, জনগণের শক্তিটা তাদের পেছনে নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিয়ানমার সশস্ত্রবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় খুবই আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের নতজানু ও দুর্বল কূটনীতির সুযোগে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বেড়েই চলেছে। সবশেষ গতকাল মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বান্দরবানের নাইক্ষৎছড়ি উপজেলায় ধুমধুম সীমান্তের বিপরীতে থাকা রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়। এতে এক শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার শেল ছোড়ার এক সপ্তাহের মাথায় গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার বাহিনী বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করে যাচ্ছে। বান্দরবনের নাইক্ষৎছড়ি সীমান্ত রেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ১২০ মিটারের ভেতরে পড়ে বিস্ফোরিত হয়, যা সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। উল্লেখ্য যে, মিয়ানমার বাহিনী প্রায়ই যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশে গোলাবর্ষণ করছে।’
‘১২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ মহা সংকটে আছে। তারপর এখন আবার সীমান্তে নতুন করে এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে মিয়ানমার বাহিনী। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফলে। এদিকে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে হত্যা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়েও সীমান্তে হত্যা সংঘটিত হয়েছে’- যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি কিন্তু মিয়ানমার সরকার বলছে এটা দুর্ঘটনাবশত বিষয়। ভুলবশত হয়ে যাচ্ছে। এখন তাহলে প্রশ্ন আর কতদিন বাংলাদেশ প্রটেস্টনোট দিতে থাকবে, পেতে থাকবে। যেখানে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর কথা সেখানে উল্টো অন্যের কথাটা নিজেরা বলছি। বাংলাদেশের দুর্বলতা কোন জায়গায় সেটাই এখন প্রশ্ন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তার জন্য তো আগে বাংলাদেশ সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ অনির্বাচিত দখলদার সরকার। সেখানেই দুর্বলতা সেটাও বুঝতে হবে। যেখানে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া দেশ পরিচালনা করে একটা সরকার, সেখানে আমাদের দুর্বলতা মিয়ানমার সরকার বুঝতে পেরেছে সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
এমএইচ/এসজি