পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নতুন কৌশল নিয়েছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নূরে আলম, আ. রহিম, শাওন হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর এটি দেখে সরকার এখন বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সমন্বয়ে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, প্রথমে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করে পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে। যদি তারা না পারে তখন পুলিশ তাদের পক্ষ হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে, গুলি করে। আবার লন্ডনে যেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় প্রতিবাদ না হয় এজন্য যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমেদের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই হয়েছে। তবে এভাবে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত জ্বালানি তেল, সার ও নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: বিপর্যস্ত কৃষক, কৃষিখাত ও জনজীবন শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সংকটকালে খাদ্য উৎপাদন অনিবার্য। আজকে মহামারির কারণে দেশে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে বাংলাদেশে বরাবরই দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। ক্ষুধা কত ভয়ংকর হতে পারে যে, মা তার সন্তানকে পর্যন্ত বিক্রি করছে। অথচ ক্ষুধা নিয়ে রাজনীতি এবং মানুষের সঙ্গে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষি উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭৮/৭৯ সালে গ্রামীণ উন্নয়নে সেসময় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু হলো গ্রামের সমৃদ্ধি। আসলে একজন জনদরদী শাসক হলেই কেবল জনগণের কষ্ট অনুভব করে তাদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করা যায়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আজকাল আওয়ামী লীগ নেতারা মিথ্যার কোরাস গাইছেন। বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ আমলের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করেছেন এতে তাদের খুব লেগেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাদের আমলে তো বাংলাদেশে গুমের কথা জানতে পারলাম। পাকিস্তান আমলেও এই কথা শুনিনি। তো পাকিস্তান আমলের কথা শুনলে আপনাদের এত লাগে কেন? আপনাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানই তো তার বইয়ে বলেছেন পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করতে হবে। আর সেই পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে আপনারা ক্ষেপে যান। আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা এসব করছে।
তিনি বলেন, এই সরকার আজীবন ক্ষমতার থাকতে চায় বলেই নিজেদের লোককে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে। অথচ সেই আইনে বলা ছিল আরও দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সেটাও তারা বাতিল করেছে। তাদের যেটাতে সুবিধা হয়েছে সেটি নিয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও করল, আবার তারাই বাতিল করল, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন বিরোধী দলে গেলে হরতাল দেবে না, আবার সেটি করেছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। সারের সংকট চলছে। জামালপুরে সারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর অন্যদিকে কুইক রেন্টালের নামে সামিট গ্রুপের কাছে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা জনগণের কাছ থেকে নিতে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে এসবের নামে কোথায় কত টাকা পাচার হয়েছে সেগুলো এখন বেরিয়ে আসছে। এগুলো লুকানো যাবে না।
অ্যাবের সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুনের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, কৃষিবিদ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, মো. দিদারুল আলম, নূরুন্নবী শ্যামল, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, আশাবুল হক আশা, ড. শফিকুল ইসলাম শফিক, আকিকুল ইসলাম আকিক, শেখ সফি শাওন, সিরাজুন্নবী মামুন, আহসান হাবিব প্রান্ত, কেএম আনিসুজ্জামান, কেআইএফ সবুর, সানোয়ার আলম, কামরুজ্জামান জনি ও শওকত ওসমান শামীম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভুইয়া।
এসএন