বিরোধী দলহীন নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে কাজটি করতে চাচ্ছে তা হচ্ছে- এখানে যাতে করে কোনো প্রকারে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না হয়। জনগণের যে দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন, সেই দাবিতে যে আন্দোলন করছে সেই নিরপেক্ষ সরকার যেন কিছুতেই এখানে করা না যায়। তাদের যে কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী একদলীয় শাসন সেটা পাকাপোক্ত করতে আবারও একটা নির্বাচন করতে চায়; যে নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল থাকবে না। বিরোধী দলকে পুরোপুরি মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, নির্মূল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে এবং পুলিশ সরাসরি তাদের সহযোগিতা করছে। আমরা বার বার বলে আসছি পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা, নিরপেক্ষ থাকা, কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে এই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার কাজ করছে।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা অত্যন্ত পরিষ্কার আওয়ামী লীগ আবারও গত দুটি নির্বাচনের মতো এবারও একটি নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তারা তাদের মতো করে নির্বাচন কমিশনকে সাজিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য তারা বিরোধীদল মুক্ত করতে চায়। তারা মুখে বলে এক কথা, কাজ করে সম্পূর্ণ উল্টা। কথা পরিষ্কার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমাতে হবে এবং সর্বপরি একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন করতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিদিন আওয়ামী লীগের নেতারা এটা বলতে চান; বিএনপি এই সন্ত্রাসী হামলা করছে। অথচ পুরো সন্ত্রাসটা করছে তারা। শুরু করছে তারা। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে যেন গণতন্ত্র না থাকে, দেশে যেন সেই রকম পরিবেশ না থাকে যে পরিবেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই; এইভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে, আহত করে জখম করে, হত্যা করে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনোই এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থনীতি ধসে পড়েছে, এই দেশে সুশাসন বলতে কিছু নেই। গণতান্ত্রিক ১৮২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার এই দেশের মানুষকে শোষণ করছে। অথচ এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। এই আওয়ামী লীগ যারা নিজেদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র দাবিদার বলে দাবি করে তাদের নেতৃত্বেই আজকে দেশের মানুষকে পুরোপুরিভাবে শোষণ করা হচ্ছে। লুটপাটের রাজস্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়ে এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে দলের তিন নেতার হত্যার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। ঢাকা মহানগরে উত্তর-দক্ষিণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬টি স্থানে সমাবেশ করা হবে। সেই অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের সমাবেশ শুরু হয়েছে। প্রতিটি সমাবেশ যেন শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে প্রতিটি সমাবেশের স্থান কোথায় কখন হবে এবং সমাবেশে কোনো কোনো নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সেইভাবেই কর্মসূচিগুলো চলছিল। কমবেশি সমস্যার মধ্যে দিয়েও কর্মসূচি আমরা পালন করে যাচ্ছি। গতকাল মিরপুর পল্লবীর ঈদগা মাঠে সমাবেশের জন্য স্থান নির্ধারিত ছিল। পুলিশ আপত্তি করার পর অন্যত্র সমাবেশ করতে দুপুর ১টার দিকে অনুমতি দেয়। সেখানে যখন আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হতে শুরু করে মঞ্চ তৈরি করতে শুরু করে তখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাঠি, অস্ত্র নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় প্রায় ৭৫ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে এই হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীরা যখন দাঁড়ায় তখন পুলিশ তাদের সরে যাওয়ার জন্য লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল পরবর্তীতে গুলিবর্ষণ করে।
‘আমরা প্রথম থেকেই যে কথাটা বার বার বলে আসছি যে, আওয়ামী লীগের এই অবৈধ সরকার তারা চায় না এখানে গণতন্ত্র থাকুক। এবং তাদের সন্ত্রাসীরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে আক্রমণ করছে বাধা দিচ্ছে। সারাদেশে অসংখ্য জায়গায় একই কায়দায় মামলা, হামলা, গুলি করা হয়েছে, আক্রমণ করে সভা পণ্ড করা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, শত প্রতিকূল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এসএন