জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে এর পরিণতি শুভ হবে না: ফখরুল
‘জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে এর পরিণতি শুভ হবে না’ বলে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব প্রশাসনের প্রতি এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রশাসনকে খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জনগনকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগন থেকেই আপনারা এসেছেন, জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন চলে, সংসার চলে। সুতরাং জনগনকে সন্মান করুন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না।”
'কথায় কথায় গুলি করবেন না বেআইনি নির্দেশ নিয়ে। ওই যেমন আজকে র্যাবের ওপরে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) এসেছে। ঠিক তেমনি যেকোনো বাহিনীর ওপরেও স্যাংশন আসতে পারে যদি আইন না মেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে থাকে।”
উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেওয়া সদস্যদের হাতে গুম হওয়া ছাত্র দলের সাজেদুল ইসলাম মুন্না ও ঝন্টু হোসেনের পরিবারের কান্নার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশে মানবাধিকার নেই, গুলি করে হত্যা করা হয়, গুম করে নিয়ে যায় সাদা পোষাকধারীরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-লবন-তেলের মূল্য কমানোর আন্দোলন করছি, পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিনের মূল্য কমানোর জন্য আন্দোলন করছি, সারের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করছি, আমাদের ভাই ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়নগঞ্জের শওকত প্রধান যে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার করার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। নুরে আলমরা প্রাণ দিতে দ্বিধা করে নাই। আজকে আমি ঘোষণা করতে চাই, আমরা কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করবো না।'
'আমাদের দাবি একটাই, এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই, ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, আমরা আমাদের বাঁচার অধিকার ফিরে চাই, আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। আমরা একটা মুক্ত সমাজে বাস করতে চাই, একটা সমৃদ্ধ দেশে বাস করতে চাই। আমরা এই চোর-ডাকাত আওয়ামী লীগ তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই।”
তিনি বলেন, 'এই আপনাদের সামনে যে এলিভেটেড যে রাস্তা- ১০ বছর ধরে এর নির্মান কাজ চলছে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন। ১০ বছর ধরে এই রাস্তায় কাজ চলছে, ক্রেইন মানুষ মেরে ফেলছে। তারপরও তার কাজ শেষ হয় না।'
'কারণ কী? কারণ একটাই। এই যে রাস্তাটা তা নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে নির্মান খরচ হচ্ছে ২১৩ কোটি টাকা। পৃথিবীর কোনো দেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে এতো খরচ হয় না। এভাবে তারা সারাদেশে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা না খাইয়ে রাখছে, শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে গেছে।'
‘নতুন ইসি ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের দাবি একটাই- এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। এই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে খুব পরিষ্কার কথা বলতে চাই, এই ব্যর্থ সরকার যারা এদেশেকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদেরকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।'
'এই নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য একটা নির্বাচন চাই। তা আমরা করব ইনশাল্লাহ। এদেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, জনগনের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা হবে-এটাই আমাদের লক্ষ্য।'
‘গৃহপালিত সংসদ’
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই আওয়ামী লীগ সরকার একে একে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করেছে। পার্লামেন্ট একটা আছে-এই পার্লামেন্ট এখন একটা রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট। এটাকে আমরা বলি গৃহপালিত পার্লামেন্ট। এখানে কোনো বিরোধী দল কাজ করে না, এখানে দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে আলাপ হয় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে, করোনার চিকিৎসা-এসব নিয়ে এই পার্লামেন্টে আলোচনা হয় না।'
'আলোচনা হয় কি? তোষামোদি, একজনের তোষামোদি, এক ব্যক্তির তোষামোদি হয়। আজকে বিচার বিভাগকে তারা (সরকার) দলীয়করণ করে ফেলেছে। এই বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না।”
‘খালেদা জিয়াকে ওরা ভয় পায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘'আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে, তার প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। তাকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে-এটা কোনো মামলাই নয়। ২ কোটি টাকার মামলা- সেই টাকা এখন ব্যাংকে বেড়ে ৮ কোটি টাকা হয়েছে।'
'আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে বাইরে উন্নত চিকিতসার জন্য নিয়ে যেতে সব ডাক্তারা বলেছেন। কিন্তু এরা তাকে বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। কারণ দেশনেত্রীকে তারা ভয় পায়। যদি উনি আবার বেরিয়ে আসেন, আবার রাজপথে নামেন তাহলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ নামবে তখন তাদের তখতে তাউস উড়ে চলে যাবে।”
তিনি বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না।”
‘‘ আমাদের এই উত্তরায় হাজী জাহাঙ্গীরসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা। এখানে এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় নাই। সারাদেশে এভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
উত্তরার পওয়েল কনভেনশন সড়কে বিএনপি মহানগর উত্তর পূর্ব জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়নগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। উত্তরার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।
গতকাল থেকে রাজধানীতে শুরু হওয়া ১৪ দিনের ঘোষিত কর্মসূচির এটি দ্বিতীয় সমাবেশ।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘‘ এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। আমি নেতা-কর্মীদের বলব, আপনারা সকলে আন্দোলনের জন্য প্রস্ততি নিন। আমরা রাজপথেই সরকার পতনের ফয়সাল করে ইনশাল্লাহ দেশে একটি জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”
মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াছিন আলী, মহিলা দলের নায়েবা ইউসুফ, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের রাসেল বাবু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে মহানগর বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, আফাজউদ্দিন আফাজ, মোহাম্মদ মোস্তফা জামান, সালাম সরকার, মোয়াজ্জেম হোসেন মিটু, আকবর আলী, টিপু সরকারসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এএস