সরকার চোখ অন্ধকার করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালি চোখে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুৎসিত কর্মকাণ্ড যাতে দেখতে না পারে, সে কারণেই গুলি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে আবারও নিষ্ঠুর খেলায় মেতেছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা চোখ অন্ধকার করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাংবিধানিক অধিকার সভা-সমাবেশ করা। অথচ কর্মসূচিগুলোতে হামলা করে, গুলি চালিয়ে নেতা-কর্মীদের হত্যার পাশাপাশি এখন শর্টগানের গুলি চালিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের চোখ অন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।
রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ভোলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী মো. শাওন প্রধানকে হত্যা করেছে। একই সঙ্গে এসব স্থানসহ নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বরগুনা, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ঝালকাঠিতে পুলিশ শর্টগানের গুলি দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ ছাত্রদল, যুবদলের কর্মীদের শরীর ও চোখ-মুখ ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ইতোমধ্যে অনেকে চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে কিংবা অসংখ্য গুলি শরীরে নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পর শর্টগানের গুলি দিয়ে নেতা-কর্মীদের পঙ্গু করে দেওয়ার আরেক নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার।
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, পুলিশকে ব্যবহার করে এটি একটি নতুন নিপীড়নের পথ অবলম্বন করা হয়েছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি নতুন ফর্মূলা। আমি এসব প্রতিহিংসামূলক নিষ্ঠুর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরনের মরণঘাতি কর্মসূচি থেকে সরে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, নিপীড়ক শেখ হাসিনার সরকার ইউটিউবে নানা চ্যানেল খুলে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকেসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নামে প্রতিনিয়ত কুৎসা রটাচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কণ্ঠ নকল করে বিভিন্ন ধরনের বানোয়াট ফোনালাপ, কিসসা-কাহিনী বানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যার সঙ্গে সত্যতার কোনো বালাই নেই।
সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য ৫ লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিয়োগ দিয়েছে; যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারা সবসময় বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে লিপ্ত। আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা, কাল্পনিক গল্প বানিয়ে কাটপিস তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বা ছাড়া হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বিদেশিদের সহায়তায় টিকে থাকা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন তারা শত শত কোটি টাকা খরচ করে ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লাগামহীন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই মিথ্যচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। কারণ সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার সব ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জীবন আর চলছেই না। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্প ও কুইকরেন্টালের নামে লুটপাটের ভর্তুকি এখন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে কৃষিসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। সত্য কথা বললেই মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের খড়্গ। সারাদেশে আবারো বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের হিড়িক চলছে। এ অবস্থায় মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরাতেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচারে মেতে উঠেছে সরকার। আমি সরকারের এসব অসদাচরণ ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এসএন